কিডনি ভালো রাখার জন্য আমাদেরকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে হবে। ইদানিং কিডনি রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাচ্ছে । কিডনি রোগের পাচটি ধাপ আছে । কিডনি রোগকে বলা হয় CKD/Chronic Kidney Disease ।প্রাথমিক পর্যায়ে যদি কারো কিডনি রোগ ধরা পড়ে ,তাহলে ডায়ালাইসিস , কিডনি প্রতিস্থাপন এবং কিডনি বিকলের মত অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলতে পারবো ।কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা কিডনি রোগীরা জানেনই না যে তারা CKD এর প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে আছেন । যেহেতু তারা জানেনা ,তাই খাদ্যতালিকা থেকে অনেক খাবার বাদ দেন না ,প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পান করেন এবং প্রোটীণ/আমিষ জাতীয় খাবার খান ।এতে করে কিডনির স্বাস্থ্য আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং হঠাত করে যখন শরীর খারাপ হয়ে তখন ডাক্তার জানিয়ে দেন যে ডায়ালাইসিস শুরু করতে হবে।কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে যদি শনাক্ত করা যায় এবং জীবনযাত্রায় গুনগত পরিবর্তন আনা যায় ,তাহলে কিডনি রোগীরা ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়াই সুস্থভাবে বেচে থাকতে পারবেন।এখন প্রশ্ন হলো কিডনি ভালো রাখবেন কিভাবে।বন্ধ্যাত্ত্ব প্রতিরোধে খাদ্যতালিকা কেমন হওয়া উচিত?
আসুন জেনে নেই কিডনি ভালো রাখবেন কিভাবে?
১) পানি এবং প্রস্রাবঃ প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে পানি পান করতে হবে ।বেশি বা কম করা যাবেনা ।প্রস্রাবের রং খেয়াল রাখবেন ।রং দেখে বুঝতে পারবেন ,যে ইনফেকশন আছে কিনা এবং পরিমিত পরিমানে পানি পান করা হচ্ছে কিনা। প্রস্রাব আটকে রাখবেন না ,এটি কিডনির জন্য খুব ক্ষতিকর ।প্রস্রাবের বেগ আসলে সাথে সাথে বাথ্রুমে যাবেন ।
২) ব্যাথানাশক ওষুধঃ নিজের ইচ্ছামত বা ফার্মেসীতে যারা কাজ করেন তাদের পরামর্শে ব্যাথার ওষুধ না পেইনকিলার খাবেন না ।মোটকথা ডাক্তারের পরামর্শ বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া ব্যাথার ওষুধ বা অন্য কোণ ওষুধ খাও্যা যাবেনা ।ধারনা করা হচ্ছে ,ব্যাথানাশক ওষুধ নিজের ইচ্ছামত খাও্যার কারনে বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেশি বাড়ছে ।
৩) উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়বেটিস: যাদের দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়বেটিস আছে ,তাদের এই দুটি রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে এবং নিয়মিত চেকাপ করতে হবে ।কারন এই দুটি রোগ আছে ,এমন মানুষের কিডনি রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ।
৪)ওজন: অতিরিক্ত ওজন যেকোনো রোগ সৃষ্টির পেছনে অন্যতম প্রধান কারন ।তাই ওজন বেশি থাকলে সেটাকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে কমিয়ে আনতে হবে এবং ওজন ঠিক থাকলে সেটাকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে ।সেজন্য স্বাস্থ্যকর খাবার এবং জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
৫) প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাঃ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পরিমিত পরিমানে পুস্টি উপাদান(শর্করা ,আমিষ,চর্বি ,ভিটামিন ,মিনারেল এবং পানি) থাকতে হবে । গবেষনা বলছে ,প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন এবং মিনারেল না থাকলে ,ভবিষ্যতে কিডনি রোগে আক্রান্ত হবাত সম্ভাবনা বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ,প্রতিদিনের ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদা পূরণ কড়টে ,পাচ রকমের শাক-সবজি এবং পাচ রকমের ফল খেতে হবে।
৬)দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপঃ মানষিক ভাবে সুস্থ থাকতে হবে ।
৭)টেস্ট : একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী eGFR and Blood Serum Creatinine level পরীক্ষা করে নিতে পারেন।তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা ।
৮)বদ অভ্যাস : ধুমপান ,মদ পান ,এলকোহল ,নেশা , কোমল পানীয় , বাইরের খাবার ,প্রক্রিয়াজাত খাবার ,তেলের ভাজাপোড়া ,ঝলশা্নো বা গ্রিল টাইপের খাবার ,অতিরিক্ত মাংস , ইত্যাদি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে । এর সাথে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ,তেল এবং লবন খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। সাদা চিনি খাওয়া বাড ডীলে খূব ঊপকাড় হবে । চা কফির সাথে চিনির পরিবর্তে অল্প পরিমানে খাটি মধু বা গাড়ো খেজুরের রস ব্যাবহার করতে পারেন।
৯)নিয়মিত হাটবেন ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্যে। ব্যায়াম করতে পারলে আরো ভালো ।
১০) Plant based food : চেস্টা করবেন মাছ মাংস খাওয়া কমিয়ে এনে শাক সবজি ,বিচি ,ডাল ,বাদাম ,ফল এসব খাবারে অভ্যস্ত হতে ।কিডনির কাজ হচ্ছে ফিল্টার করা । আমাদের রক্ত থেকে বর্জ্য এবং দূষিত পদার্থকে কিডনি তার ছাকনির মাধ্যমে আলাদা করে এবং তরলকে মূত্রথলিতে নিয়ে যায় ,যা পরবর্তীতে প্রস্রাব আকারে বের হয়ে আসে ।তাই যেসব খাবার সহযে পরিপাক হয় সেসব খাবার কিডনির জন্য ভালো । যেমন -গরুর মাংস পরিপাক হতে অনেক সময় লাগে এবং এসব ফিল্টার করতে কিডনিকে অনেক কস্ট করতে হয় ।
১১) না খেয়ে থাকা :সপ্তাহে এক দুইদিন বা যতদিন পারেন , রোজা বা উপোস থাকতে পারেন ।এতে করে কিডনি বিশ্রাম পাবে। Dry fasting বা কোনো কিছু না খেয়ে থাকা and Intermittent fasting বা শুধু পানি খেয়ে মাঝেমাঝে সারাবছর জুড়ে ফাস্ট করতে পারেন ।এতে করে শরীরের ক্ষত দূর হবে ,রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে । এর সাথে অনেক রোগের সম্ভাবনা কমে যাবে ।
বয়স যখন কম আছে ,তখন থেকেই যদি আমরা জীবনযাত্রাকে স্বাস্থ্যকর করে তুলি ,তাহলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ।আর স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা যেকোনো ধরনের রোগের সম্ভাবনা কমায় ।
Recent Comments