স্বাস্থ্য যখন অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত ,তখন আমাদের সব স্বাস্থ্যের প্রতিই যত্নবান এবং শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরী । প্রজনস্বাস্থ্য কে সুরক্ষিত রাখতে যেমনি প্রজনন অংগপ্রত্যংগ সম্পর্কে জানতে হবে ,যত্ন নিতে হবে, ঠিক তেমনি পরিপূর্ন এবং শ্রদ্ধাশীল যৌন সম্পর্ক প্রজনন স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। আর আমাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান লাভ করতে হবে , অপরকে জানাতে হব এবং এসব বিষয়ে কেউ যেনো লজ্জা না পায় ,বরং শ্রদ্ধাশীল হয় ,সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন এবং দায়িত্ত্বশীল হতে হবে।
পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সেবা নির্ভর করে অনেক গুলো বিষয়ের উপর বিজ্ঞান সম্মত জ্ঞানের উপর । কিশোর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের পরবর্তী ধাপে যেসব বিষয় পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত ,তা নিম্নরোপঃ
১) বয়ঃসন্ধিকালঃ
- বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এবং প্রজনন ক্ষমতায় সচলতার সাথে কিশোর বয়সে ছেলেদের মনে অনেক প্রশ্ন এবং উদ্বেগ আসে। ছেলেদের জন্য, বয়ঃসন্ধির প্রথম দৃশ্যমান চিহ্ন এবং দ্বিতীয় যৌন পরিপক্বতা রেটিং (এসএমআর) পর্যায় (এসএমআর ২) এর হলমার্কটি হলো টেস্টিকুলার এর পরিবর্তন এবং বর্ধিতকরণ।
- উদাহরনসরূপ বলা যেতে পারে লিঙ্গবৃদ্ধি (এসএমআর এর হলমার্ক),এই যেমন পিনেস এর সাইজ বৃদ্ধি পায় । । আবার এসএমআর-৪ এর সময় পুরুষের টেস্টিকুলার ভলিউম বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৯ থেকে ১০ সেন্টিমিটার এ পৌঁছায় এবং প্রজনন অংগপ্রত্যঙ্গ আকারে সাধারন বৃদ্ধি লাভ করে ।
২) বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক বৃদ্ধিতে পরিবর্তন :
- প্রত্যেক্টা মানুষ আলাদা আলাদা।তাই দেখা যায় অনেক সময় ,কিশোর বয়সে একটা ছেলের শারীরিক পরিবর্তন আরেকটা ছেলের থেকে ভিন্ন । কারো দেরীতে বৃদ্ধি হয় ,কারো তাড়াতাড়ি। তবে ঠিক সময়ে শারীরিক বিকাশ না হওয়ার ক্ষতিকর এবং নেতিবাচক প্রভাব আছে প্রভাব । যার ফলাফল আগ্রাসন এবং উচ্চ মাত্রার অপরাধমূলক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
- বয়ঃসন্ধিকালে অপরিপক্ক পরিবর্তন অথবা দেরিতে পরিবর্তন এর ফলে সৃষ্টি হওয়া সমস্যার মধ্যে রয়েছে ব্রন , অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি, টিজিং, ধর্ষণ, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা,আত্নবিশ্বাস লোপ , বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ।
৩) যৌনতাঃ
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী , যৌনতা মানব জীবনযাত্রার একটি কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি যা লিঙ্গ, লিঙ্গ সনাক্তকরণ এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে এর সম্পর্ক ও ভূমিকা, যৌন অভিযোজন, ঘনিষ্ঠতা, এবং প্রজনন কে অন্তর্ভুক্ত করে। যদিও যৌনতা চিন্তাধারা, কল্পনা, ইচ্ছা, বিশ্বাস, আচরণ, খাবারের ভূমিকা, এবং ব্যাক্তিগত সম্পর্কে প্রকাশ করা যায়, তবুও যৌনতার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করা হয় না।
- একজনের যৌনতা জৈবিক, মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং ধর্মীয় কারণ সহ বিভিন্ন কারন দ্বারা প্রভাবিত। এমনকি বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হওয়ার আগেই ছেলেরা তাদের নিজেদের লিঙ্গ এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যজ্ঞ এর পরিবর্তন সম্পর্কে কৌতুহলী হয়ে উঠে , বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন অনুভব করে , একটি বাচ্চা কিভাবে পৃথিবীতে আসে সে বিষয়ে প্রশ্ন করে । তবে সব মা –বাবা এবং পরিবারের বড়রা তাদের সন্তানদের সঙ্গে এই স্বাভাবিক যৌনতা সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেন না ,যার কারনে যৌনতা ,শারীরিক এবং পরিবর্তন এবং জৈবিক চাহিদার মত স্বাভাবিক বিষয়গুলো নিয়ে কিশোরদের মনে ভুল ধারনা জন্মায় যা আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে ।
- তাই বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করে, যৌন সংক্রামক রোগ ও অনিরাপদ গর্ভপাত প্রতিরোধ এবং নিজের এবং অন্যের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সাহায্য করতে হবে ।
৪) সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট :
- বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ নতুন আকার ধারন করে, হরমোনের পরিবর্ত্ন আসে ,এবং এর ধারাবাহিকতায় অনেক মানষিক পরিবর্তনও আসে। আর এই সময়ে তাদের শারীরিক যৌন পরিপক্কতা, বয়সের উপযুক্ত যৌন আচরণ, ইতিবাচক যৌন পরিচয় এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের অনুভূতি প্রকাশ পায় ।
- এছাড়াও ইরেকশন ,ইজাকুলেশন ,মাস্টারবেসন এবং স্বপ্ন দোষ/ওয়েট ড্রিম এর মত ঘটনার সূত্রপাত হয় বয়ঃসন্ধিকালে।
৫)মাস্টারবেসন (হস্তমৈথুন) এবং স্পার্ম (শুক্রানু) এর আবির্ভাব :
রিসার্চ অনুযায়ী ছেলেদের ক্ষেত্রে গড়ে প্রথম হস্তমৈথুন করার বয়স ১২ এবং ১৪ বছর ,এর মধ্যে অধিকাংশ ছেলেরা নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং যৌন বিকাশ সম্পর্কে ধারনা লাভ করে। মাস্টারবেসন সম্পর্কে অনেকের মধ্যেই অনেক নেতিবাচক ধারনা রয়েছে ,তবে নতুন বিজ্ঞানসম্মত গবেষনার ফলাফল অনুযায়ী, মাত্রাতিরিক্ত মাস্টারবেসন প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ,তবে স্বাভাবিক মাস্টারবেসন অনেক রোগের সম্ভাবনা কমায় । বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের মধ্যে যে প্রচন্ড উত্তেজনা কাজ করে , হস্তমৈথুন্য সেটা কমিয়ে অনেক উদ্দ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।
আর যেহেতু বয়সন্ধিকালে পুরুষ প্রজননতন্ত্র শুক্রাণু উত্পাদন শুরু করে , তাই এই সময় থেকে তাদের উর্বর বলে গণ্য করা হয়। আর তাই এই সময়ে সুষম এবং পরিপূর্ন খাদ্যাভাস রক্ষা করা খুবই জরূরী , যা তাদের পরবর্তী জীবনের পরিবার পরিকল্পনায় সাহায্য করবে
৬) যৌন আচরণ এবং এর ফলাফল
৭) অযাচিত/অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক
৮) কিশোর বয়সে সম্পর্কের প্রতি অসহিংসতা , হুমকির সম্মুখীন, যৌন হয়রানি, জোরপূর্বক কাউকে যৌন হয়রানী করা “মানসিক এবং শারীরিক” পরিবর্তনের ফলে হতে পারে , যা কিশোর অপরাধ এর অন্তর্ভুক্ত।
৯)যৌন সংক্রামক রোগ পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্যকে ঝুকিপূর্ন করে তুলে এবং কম বয়সে পিতৃত্ত্ব লাভ তার আর্থ–সামাজিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ।
আর তাই পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা এবং সুরক্ষায় “যৌন অক্ষমতা , বন্ধ্যাত্ব এবং যৌন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের বাইরেও তাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাবাস ,নিজের শরীর এবং সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল এবং শ্রদ্ধাশীল আচরণ করার লক্ষ্যে অনুপ্রানিত করতে হবে। বলা বাহুল্য, যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার একটি বুদ্ধিমান ,ন্যায়পরায়ণ সহনশীল ,শ্রদ্ধাশীল , অহিংস্র বিশ্বের বিকাশ ঘটাতে আমাদের আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে সক্ষম ।
Recent Comments