পরিবার নামক শব্দের সাথে আমাদের অনেক আবেগ –অনুভূতি জড়িয়ে আছে । আর তাই পরিবার কল্পনাও আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । বৈজ্ঞানসম্মত উপায়ে পরিবার কল্পনা সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলাই পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধ্বতির একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। পরিবার পরিকল্পনা বলতে শুধু “সন্তান জন্মদান অথবা কিভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমানো যায়” – এমন ধারন থেকে বের হয়ে আসতে হবে ।
 পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই কিশোর-কিশোরিদের পরিপূর্ন জ্ঞ্বান দিতে হবে ।প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল করে তোলার মাধ্যমেই আমরা  তাদেরকে তাদের পরবর্তী জীবনের পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করতে পারি । বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর –কিশোরীদের যেহেতু অনেক শারীরিক এবং মানষিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় ,তাই এইবয়সে তাদের প্রতিদিন সুষম খাদ্য তালিকায় অভ্যস্থ হতে হবে। আর এতে করে তাদের প্রজনন ক্ষমতা উর্বর হবে । আমাদের  এমনিতেই বন্ধ্যাত্ত্ব সমস্যা আছে ,আর এজন্যই কিশোর বয়স থেকেই সবাইকে একটি সুন্দর খাদ্যাবাস এবং জীবন ব্যাবস্থ্যা গ্রহন করার মাধ্যমেই  পরিপূর্ন প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যা তাকে তার পরবর্তী জীবনে সন্তান জন্মদান থেকে শুরু করে প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করবে ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবার পরিকল্পনাঃ 
এবার আসা যাক বাস্তবতায় ।আমাদের দেশে পরিবার পরিকল্পনা এবং পদ্ধতিকে এমন ভাবে জনসম্মুকে নিয়ে আসা হয়েছে ,যেখানে আমদের শেখানো হয় “জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতা ”  অথবা “ছেলে অথবা মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ট ,একটি হলে ভালো হয় ”। এসব স্লোগান এবং কর্মকান্ড দেখেই বোঝা যায় যে বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা এবং পদ্ধতি শুধু বিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য । যত অনুশাষনই থাকুক না কেনো ,আমাদের স্বীকার করতেই হবে ,আমাদের দেশে একটা বড় অংশ আছে যারা বিবাহিত না কিন্তু শারিরীক সম্পর্কে স্বক্রিয় (Sexually active) । এদের মধ্যে অনেকেই আবার সাবধানতার অভাবে প্রেগনেন্ট হয়ে যাওয়ার পর অনিরাপদ গর্ভপাতের দিকে ঝোকছেন ।যেহেতু আমাদের দেশের  পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত সকল সেবাসম্মুহ এবং ব্যাবস্থা শুধু বিবাহিততের জন্য ,তাই অবিবাহিতরা চাইলেও এই সেবা নিতে পারছেন না ।যার ফলে অনেক অবিবাহিতরা  বিভিন্ন অনিরাপদ ক্লিনিক অথবা ব্যাক্তিগত পর্যায়ে “অনিরাপদ গর্ভপাত” করিয়ে নিচ্ছেন ,যা মেয়েদের মৃত্যুর সংখ্যা এবং মৃত্যু ঝুকি আরো বাড়াচ্ছে ।তাছাড়া এই অনিরাপদ গর্ভপাত পরবর্তীতে প্রজনন স্বাস্থ্যকেও আরো ঝুকিপূর্ন এবং ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলছে। তাই এখন বিভিন্ন এনজিও , স্বাস্থ্য সংস্থা ,রিসার্চ ফার্ম বাংলাদেশের এই অবিবাহিত কিন্তু সেক্সুয়ালি একটিভ মানুষের সঠিক সংখ্যা বের করে এনে তাদের প্রজনন  স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে ।
যেসব জায়গায় গেলে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত পরামর্শ পাওয়া যাবেঃ
১) পরিবার কল্যান সহকারী
 ২)  স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৩)
এনজিও ক্লিনিক
৪) মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল /পরিবার পরিকল্পনা মডেন ক্লিনিক
 ৫) সদর হাসপাতাল
৬) ইঊনিয়ন স্বাস্থ্য ও  পরিবার কল্যান কেন্দ্র ৭) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
 ৮) মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র
আর পরিবার পরিকল্পনা ও পদ্ধতি বিষয়ক সেবা সম্মুহ পাওয়া যাবেঃ
১) পরিবার কল্যান সহকারী
২)  চিকিৎসক/ ডাক্তার
৩) এনজিও স্বাস্থ্যকর্মী
৪) সেবিকা(নার্স)/ মিডওয়াইফ
 ৫) উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার
৬) পরিবার কল্যান উপদর্শিকা
 ৭) কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এই স্বাস্থ্য সেবাসম্মুহ শুধুমাত্র বিবাহিত নারীপুরুষের জন্য ।
তাই অবিবাহিতদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের আলাদা স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন ,যাতে করে অনিরাপদ গর্ভপাত , মৃত্যু হাড় এবং মৃত্যু ঝুকি রোধ করা সম্ভব হয়  । পরিবার পরিকল্পনা হোক সবার জন্য উন্মুক্ত ,এটি ব্যাতিত প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভবপর নয় ।  কিশোর কিশোরীরা হয়তো পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে বা জানতে অনাগ্রহী হতে পারে, অস্বস্থিতে পড়তে পারে ,তাই কিশোর কিশোরীদের উপযোগী প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী ।