আসুন জেনে নেই সূর্যের আলো আমাদের মানষিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী-
মানষিক স্বাস্থ্যঃ নির্দিস্ট সময়ে যখন আপনি সূর্যের আলোতে যাবেন ,তখন ব্রেইন থেকে সেরোটোনিন নামক হরমোন নিসৃত হয়,যা আমাদের মানষিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। সেরোটোনিন এর পরিমান শরীরে কমে গেলে ,মানষিকভাবে বিপর্যস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।শীত প্রধান দেশের মানুষের মধ্যে এক প্রকার ডিপ্রেশন (SAD= Seasonal affective disorder) দেখা যায় কিন্তু সূর্যের আলো এটি কমাতে পারে বা দূর করতে পারে।
হাড়ের স্বাস্থ্য : শরীরে যদি পরিমান মত ভিটামিন ডি না পায় ,তাহলে হাড়ের ক্ষয় বা হাড়ের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে । শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথাও হয়ে থাকে অনেক সময় ।ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ের যে অসুখ হয় ,সেগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো –Osteoporosis and Osteomalacia .তাই সূর্যের আলোতে নিয়মিত যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়: যেহেতু সূর্যের আলো শরীরের দূষিত এবং ক্ষতিকর পদার্থকেত নিস্ক্রিয় করে ফেলে ,এতে করে শরীরে ক্ষত বা প্রদাহ সৃস্টি হয় না ।এতে করে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় ।
ত্বকের অসুখ কমায় : অনেকের ত্বকে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের অসুখ হয় বা দাগ হয়, যা বাইরে থেকে দেখা যায় ।এমন একটি পরিচিত অসুখ হলো সরিয়াসিস। কিছু কিছু সময় ,জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার পাশাপাশি সূর্যের আলো এসব অসুখ থেকে মুক্তি দেয় বা কমিয়ে দেয় ।
ভিটামিন এবং মিনারেল এর কার্যকারীতাঃ আমরা ফল এবং শাক-সবজির মাধ্যমে যে ভিটামিন এবং মিনারেল খাই, সেগুলোকে শোষন এবং পরিপাকেও ভিটামিন ডি এর দরকার হয় ।আর সূর্যের আলো থেকেই আপনি প্রতিদিন এই ভিটামিন ডি নিজের শরীরে তৈরী করতে পারছেন ।
ঘুম : অন্ধকার হয়ে গেলে আমাদের শরীরে মেলাটোনিন তৈরী হয় ,যা আমাদের ঘুমের সিগনাল দেয় বা ঘুমাতে সাহায্য করে ।আমরা যদি দিনের বেলা বা সকালে সূর্যের আলোতো যাই ,তাহলে এই মেলাটোনিন এর পরিমান ঠিক থাকবে,দিনের বেলা বেশি মেলাটোনিন তৈরী হবে না এবং রাতে সঠিক সময়ে ঘুম পাবে ।তবে এজন্য জীবনযাত্রাও স্বাস্থ্যকর হতে হবে ।মোটকথা সূর্যের আলো আমাদের শরীরের কার্ডিয়ান রিদমকে নিয়ন্ত্রন করে আমাদের সঠিক সময়ে ঘুমাতে সাহায্য করে।এতে করে রাতের বেলা সঠিক সময়ে ঘুম আসবে।
ওজন কমায় : যাদের অতিরিক্ত ওজন আছে, সূর্যের আলো তাদের স্কিনে থাকা হোয়াইট ফ্যাট সেলকে গলিয়ে ফেলে বা সরিয়ে ফেলে ।এতে করে ওজন কমে বা নিয়ন্ত্রনে থাকে।
এছাড়াও সূর্যের আলো আমাদের নিত্যদিনের স্ট্রেস এর সাথে মানিয়ে নিতে বা কমাতে সাহায্য করে ।টক্সিন কে নিস্ক্রিয় করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে এবং বিভিন্ন অসুখের সম্ভাবনা কমায়।মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।স্বাস্থকর জীবনযাত্রার সাথে সূর্যের আলো আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রন করতে বা কমাতেও সাহায্য করে ।
যেহেতু সূর্যের আলো ultraviolet (UV) radiation নির্গত করে, এবং শরীরের ভেতরে প্রবেশ করার পর ডিএনএ কে মেরে ফেলার মাধ্যমে স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায় ,তাই সকাল দশটার আগে এবং বিকেল চারটার পরের সূর্যের আলো উপকারী।তাই প্রতিদিন চেস্টা করবেন এই সময়ে সূর্যের আলোতে গিয়ে অন্তত ১০-১৫ মিনিট সময় কাটাতে।সানবাথ নেয়ার উপযুক্ত সময় সকাল ১০ টার আগে (৯টার আগে হলে আরো ভালো) এবং বিকেল চার টার পরে। কারন এই সময়ে ক্ষতিকর রশ্নি থাকেনা সূর্যের আলোতে ।তাই নতুন গবেষনা বলে , সকালের রোদের আলো এবং বিকালের রোদের আলো সবচেয়ে উপকারী।
ভিটামিন ডি বিভিন্ন ধরনের খাবারেও থাকে ।তবুও সুর্যের আলো থেকে একদম বিনামূল্যে আমাদের শরীরে তৈরী হওয়া ভিটামিন ডি থেকে কেনো নিজেকে বঞ্চিত করবেন? মানষিক ভাবে ভাল থাকার জন্য সূর্যের আলোর বিকল্প আর কিছুই হতে পারেনা ।
অনেকেই ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট খেতে চান বা খান ।কিন্তু শীত প্রধান দেশের জন্য এটি গ্রহন করা যেতেই পারে, যেখানে অনেকদিন ধরে সূর্যের আলোর দেখা পাওয়া যায় না ।অথবা আপনি যদি এই করোনাকালীন সময়ে বাসার বাইরে সূর্যের আলোতে যেতে না পারেন,তাহলে ভিটামিন ডি এর ট্যাবলেট খেতে পারেন। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই চেস্টা করবেন ,সুযোগ থাকলে সূর্যের আলো থেকে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরী করার এবং তারপর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখার, যেগুলোতে ভিটামিন ডি আছে।
কখন সূর্যের আলোতে যাবেন ,সেটা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক আছে। তাই যে সময়ের সূর্যের আলো আপনার জন্য আরামদায়ক ,সে সময়ের সূর্যের আলোতেই যাবেন।
আমার কথা বিশ্বাস করতে হবে না ।এই নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো চেক করে নিতে পারেন বিস্তারিত তথ্যের জন্যঃ
সূর্যের আলোতে ভিডামিন ডি থাকে না তবে সূর্যের আলো যখন আমাদের শরীরে এসে পরে ,তখন শরীরে ভিটামিন ডি তৈরী হয়।কিন্তু সকাল ১০ টা থেকে বিকেল চারটার ইউভি রশ্নিতে ক্ষতিকর রশ্নি থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরী করতে পারে ।তাই ভিটামিন ডি এর জন্য পুরোপুরি সূর্যের আলোর উপর নীর্ভরশীল না হয়ে,ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারগুলো খেতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ডি এর পুস্টিচাহিদা পূরন করার জন্য।যদিও ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের তালিকা খুব কম ।তাই সতর্ক হতে হবে।
- https://www.who.int/news-room/q-a-detail/radiation-sun-protection
- https://www.who.int/news-room/q-a-detail/radiation-the-ultraviolet-(uv)-index
- https://www.epa.gov/sunsafety/health-effects-uv-radiation#skincancer
- https://www.epa.gov/sunsafety
সবাই ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
I can speak much on this question.