মানুষ হিসেবে বড় হতে গিয়ে আমরা কখন জানি ছেলে অথবা মেয়ে হিসেবে বড় হয়ে যাই । যদিও এই পার্থক্যটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালে আমাদের শারীরিক এবং মানষিক পরিবর্তনকে আমরা খুব সহজ ভাবে মেনে নিতে পারিনা । আমাদের সাথে কেউ খোলামেলা আলোচনা করে না ।আমরা লজ্জা পাই ।অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাই কিন্তু বুঝিয়ে বলার মত কেউ থাকেনা ,নিজেদের কে সবার মধ্যে থেকে গুটিয়ে নিiই ,লোক সরগম থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতে চাই ,কোথাও যেতে চাইনা ,বিষন্নতায় ভোগী ,বাইরের পরিবেশ কে পর মনে হয়,এমনকি অনেক সময় নিজের পরিবারকেও আপন মনে হয় না । আমরা আমাদের পরিবর্তনকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারি না কারন এসব স্বাভাবিক এবং বিজ্ঞানসম্মত পরিবর্তন নিয়ে আমাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা হয়না ।
তাই আমরা জানার বদলে না জেনেই লজ্জ্বার আবরনে নিজেদের ঢেকে রাখি আর বয়ঃসন্ধিতেই বিচরন করি এমন এক পৃথিবীতে যেখানে আমরা মনে মনেই ভাবতে থাকি , ‘কেউ আমাকে বোঝে না’। আমাদের কিছু পরিবর্তন দেখা যায় আর কিছু অদেখা ।এই যেমন বয়সঃন্ধিতে একটা মেয়ের ক্ষেত্রে মাসিক/পিরিয়ড একটি গুরুত্ত্বপূর্ন পরিবর্তন ।পরিবার থেকেই বলা হয় ,”তোমার মাসিক হবে , এটা সব মেয়েদের হয়ে থাকে কিন্তু ছেলেদের সামনে বলবে না ,এটা লজ্জ্বার বিষয় ”। আর এভাবেই আমাদের ভুলভাবে শিখানো হয় ।ঠিক তেমনি বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই আমাদের ছেলেদের ক্ষেত্রে স্বপ্ন দোষ অথবা ওয়েট ড্রিম হওয়া শুরু হয় । ”স্বপ্ন দোষ” কথাটা কিভাবে এসেছে অথবা কতটুকু সঠিক ,সেটা এখনও বিতর্কিত। তবে বিজ্ঞানের ভাষায় একে নকটারনাল এমিশন বলে থাকে ।
অনেক সময় ঘুমের মধ্যে বডি থেকে সাদা রংয়ের ফ্লুইড বেরিয়ে আসে ,অনেকের ঘুম ভেঙ্গে যায় অথবা অনেকে ঘুম থেকে উঠার পর বুঝতে পারি । এটা বেড়ে উঠার খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া । ঘুমের মধ্যে এরকম ফ্লুইড বেড়িয়ে আসা ইজাকুলেশন এর কারনে হয়ে থাকে এবং এটাই প্রমান করে যে একটা ছেলে বয়সঃন্ধিতে ঠিকঠাকমত বেড়ে ঊঠছে । এখন নিশ্চই তোমার মনে প্রশ্ন আসছে ? কেনো এই ওয়েট ড্রিম বা স্বপ্ন দোষের ব্যাপারটা ঘুমের মধ্যে আমাদের সাথে ঘটে থাকে ? বয়ঃসন্ধিতে আমাদের ছেলেদের বডিতে হরমোন তৈরী হতে থাকে যাকে টেস্টেস্টোরেন (testosterone) বলে । এই হরমোন তৈরী হলেই ছেলেদের স্পার্ম/শুক্রানু তৈরী হওয়ার ক্ষমতা লাভ করে । আমরা সবাই জানি ,ছেলেদের শুক্রানু পরবর্তী জীবনে মেয়েদের ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট এবং ভ্রুন তৈরী করে ,যা থেকে একটা সন্তান জন্মগ্রহন করতে পারে ।আবার বয়সন্ধিতে অনেক সময়েই ছেলেদের ইরেকশন হয়ে থাকে ।হরমোন তৈরী হওয়ার কারনে ছেলেদের বডিতে সিমেন তৈরী হয়ে থাকে আর এই সিমেন বের হয়ে আসার একটা প্রক্রিয়া হলো ওয়েট ড্রিম /স্বপ্ন দোষ । তাই , স্বপ্ন দোষ অথবা ওয়েট ড্রিম –দোষের কিছু না ,এটা নিয়ে ভয় অথবা লজ্জা পাবার কিছু নেই ।বরং এই ওয়েট ড্রিম এটাই প্রমান করে যে, একটা ছেলে তার বয়ঃসন্ধিতে ঠিকঠাক মতই বেড়ে উঠছে । তাই এটা নিয়ে মানষিক অশান্তিতে না ভোগে আমাদের বিজ্ঞান সম্মত কারন জানতে হবে ,ভয়কে জয় করতে হবে ।
জীবন অনেক সুন্দর তো,তাই না ? কেনো ভয় পাবে ? কেনোইবা লজ্জ্বা পাবে নিজের শারীরিক /মানষিক পরিবর্তন নিয়ে ? আকাশটাকে শেষ সীমানা বানিয়ে বিচরন করো সুন্দর এই পৃথিবীকে ।জীবন তো একটাই ।এবং বয়সন্ধিকাল? হুম আমরা করবো জয়…নিশ্চয় …..আমরা করবো জয়….! আর আমাদের আশেপাশে যারা বয়ঃসন্ধিকালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ,আমাদের বড়দের উচিত ওদেরকে বুঝিয়ে বলা ,খোলামেলা আলোচনা করা যাতে করে সে নিজের পরিবর্তনগুলোকে সম্মান করতে শিখে । আর হ্যা ,’ কেউ বোঝেনা আমাকে’ –এটা বলে মন খারাপের পৃথিবী বানানোর আগে একবার ‘নিজেকে বুঝো’ ,নিজের শারীরীক পরিবর্তন গুলোকে সহজ ভাবে মেনে নাও ,নিজে জানো,অপরকে জানাও । মনে রেখো পৃথিবীর সব সুন্দর পরিবর্তন গুলো তোমার অপেক্ষায়। আর তাই ,নিজেকে জানো ,বদলে যাও এবং বদলে দাও ।এই পৃথিবী তোমার ,তুমি এখানে সুন্দরভাবে বিচরন করবেনা না তো কে করবে?
Recent Comments