‘সেক্স’ শব্দটার সঠিক অর্থ  আমাদের সমাজে প্রচলিত না ,তাই প্রয়োজনীয় এবং সঠিক জ্ঞানের অভাবে সেক্স এডুকেশনও অনেকটাই অবহেলিত। নিজেকে জানার অপর নাম  ”সেক্স এডুকেশন” সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা বললেও খুব একটা ভুল হবে না কেননা এই অবহেলিত শিক্ষার মধ্যেই রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক গুরুত্ত্বপূর্ন তথ্য !

আমাদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে কেনো শরীরের অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বদলাতে থাকে ?কেনো শরীরের বিভিন্ন স্থানে লোম গজায়? বয়ঃসন্ধিতে কেনো আমাদের কারনে-অকারনে মন খারাপ হয় ?কেনো বয়ঃসন্ধিতে  ঘুমের বধ্যে ছেলেদের বডি থেকে সাদা ফ্লুইড বের হয়ে আসে?  কেনো আমরা সবসময় অনেক হরমোনের পরিবর্ত্নের মধ্যে দিয়ে যাই এবং আমাদের মানষিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়?  কেনো আমাদের অনেক ব্রন/পিম্পলস হয় ?   কেনো  মাসিকের সময় ডিপ্রেশন অথবা মুড বদলাতে থাকে অকারনেই ? কেনো প্রজনন  অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নানা রোগের শিকার হয় ? কেনো পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে  জানা  জরুরী? শারীরিক পরিশ্রম এর সাথে ভার্জিনিটির সম্পর্ক কি?  মাস্টারবেসন কি ক্ষতিকর ?  কেনো মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত কুসংস্কার মানষিক স্বাস্থ্যের অন্তরায় ?কেনো মাসিক নিয়ে লজ্জা পাওয়া উচিত না ?  কিভাবে  মাসিকের সাথে মাত্রিত্ত্বের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক ?  কেনো বন্ধ্যাত্ত্ব রোধে বয়সন্ধিকাল থেকেই সচেতন হতে হবে  এবং জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে?  আমাদের খাদ্যাভাসের সাথে কিভাবে প্রজনন স্বাস্থ্য অতোপ্রতোভাবে জড়িত ? একটা ছেলে অথবা মেয়ে  বেড়ে উঠার সময় যেসব শারীরিক এবং মানষিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় ,কেনো এসব স্বাভাবিক এবং লজ্জ্বা না পেয়ে এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলা উচিত ,নিজে জানা এবং অপরকে জানানো উচিত ?

উপরের প্রত্যেকটি প্রশ্নের   উত্তর পাওয়া যায় ”সেক্স এডুকেশন”  এর মাধ্যমে । আর তাই  এক বাক্যে  বলা যায় – ” বয়ঃসন্ধিকাল থেকে আমাদের জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত, আমাদের মধ্যে যেসব শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন  আসে ,সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানার সমার্থকই হলো সেক্স এডুকেশন ” ।

আমাদের সার্বজনীন শিক্ষা ব্যাবস্থায় এই বিষয়গুলো এতো গুরুত্বের সাথে পড়ানো হয়না  ,এমনকি সব বিষয়গুলো সিলেবাসেও নেই আর থাকলেও ক্লাসে সেই অর্থে পড়ানো হয়না । এতে করে একটা ছেলে অথবা মেয়ে তার বয়ঃসন্ধিকালে সেসব শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় ,সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতেই পারছেনা । পরিবারের    কাছেও  হয়তো সেই অর্থে কোনো প্রশ্ন করতে পারে না লজ্জায় অথবা ভয়ে।  তখন হয়তো বন্ধুবান্ধব ,সমবয়সী অথবা ইন্টারনেট থেকে ভুল তথ্য পেয়ে যাচ্ছে ,যা সুস্থ মানষিক বিকাশের অন্তরায় । এছাড়াও ইন্টারনেটে সেক্স এডুকেশন লিখে সার্চ দিলে সেই অর্থে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না , আর যেসব হাই লেভেলের সায়েন্টিফিক জার্নার আর্টিক্যাল আছে ,তা পড়ে সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব না ।

 চাইলেই একদিনে শিক্ষা ব্যাবস্থাকে বদলে দেয়া যাবে না ,তবে পরিবার থেকে যদি এই শিক্ষা চালু করা হয় ,তাহলে এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে বয়ঃসন্ধিকালে যে মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে একটা মানুষকে যেতে হয়,তার জন্য অন্তত মানসিক সাস্থ্য ক্ষতিপ্রস্থ হবে না এবং পরিবারের সাথে বন্ধুত্ত্বপূর্ন সম্পর্ক শিশুর পরিপূর্ন মানষিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া সেক্স এডুকেশন এর মানেটা সেই অর্থে আমরা জানিনা ,যার কারনে এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক জড়তা কাজ করে।

একটা উঠতি বয়সের বাচ্চা যখন টিভিতে কনডম  অথবা স্যানিটারি  প্যাড এর বিজ্ঞাপন দেখে প্রশ্ন করে এটা কি , বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘এটা বড়দের ব্যাপার  বলে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়া হয় ’। আবার যখন বয়ঃসন্ধিতে বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল পরিবর্তনের কারনে শারীরিক পরিবর্তন  দেখা দেয় ,এটা নিয়েও বাচ্চাদের ছোটাবেলা থেকেই সঠিক তথ্য দেয়া হয়না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই । এতে করে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে , শারীরিক এবং মানষিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ,সঠিক তথ্যের অভাবে একটা মানুষের পরিপূর্ন মানষিক বিকাশ সম্ভবপর হচ্ছে না । আর মানষিক স্বাস্থ্য কে বাদ দিয়ে ,জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়তো একটু বেমানান।

আর তাই পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে ,আমাদের জানতে হবে সেক্স এডুকেশন কি এবং কেনো এটা পরিপূর্ন মানষিক বিকাশে সহায়ক।

সেক্স এডুকেশন আমাদের যা  যা শেখাতে পারে ,তা হলো  মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, বয়ঃসন্ধিকাল, হরমোনাল পরিবর্তন এর সাথে কিভাবে আমাদের মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন হয়  ,প্রজননতন্ত্র ,প্রজনন প্রক্রিয়া ,বিভিন্ন যৌনরোগের কারন (এসটিডি-সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ), পরিবার পরিকল্পনা এবং পদ্বতি কেনো গুরুত্ত্বপূর্ন ,কিভাবে আমাদের প্রত্যেক্টা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমাদেরকে নিয়ন্ত্রন করে ।

সেক্স এডুকেশন নিয়ে আমাদের নিজেদের জ্ঞান বাড়াতে হবে,এটা নিয়ে কথা বলতে হবে ,পরিবারেই ছোটদের সাথে বন্ধুত্ত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়েও তোলতে হবে ,তাদেরকে গল্পের মাধ্যমে বুঝিয়ে বলতে হবে যাতে করে তারা বাইরের পরিবেশ থেকে ভূল তথ্য না পায় ,যাতে বয়ঃসন্ধিকালে তারা  নিজেদের শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে লজ্জা না পায় ,হীনমন্যতায় না ভোগে , একটা মেয়ে যাতে তার মাসিক চলাকালীন সময়ে আশেপাশের মানুষের  কাছ থেকে সহযোগিতা পায় , ফার্মেসীতে যাতে  স্যনিটারি প্যাড কিনতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় না পড়তে হয় ,একটা ছেলে যাতে তার নতুন গজিয়ে ওঠা দাড়ি গোফ নিয়ে লজ্জা না পায়  অথবা ঘুমের মধ্যে  তার ওয়েট ড্রিম যেনো তার চিন্তার জগততে বাধাগ্রস্থ না করে।

আসুন কথা বলি সেক্স এডুকেশন নিয়ে ,পরিবারের ছোটদের বন্ধূ হয়ে ওঠি ,আশেপাশের মানুষগুলোকে সচেতন করি এবং সর্বোপূরি  এটা নিশ্চিত করি যাতে সঠিক তথ্যের অভাবে আমাদের মানষিক বিকাশ এবং মানষিক স্বাস্থ্য বাধাগ্রস্থ না হয় । কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে   এতো অস্থিরতা ,এতো আপরাধ ,এতো ডিপ্রেশন, আমরা চাইলেই পারি সঠিক তথ্যের মাধ্যমে একটা মানুষের বয়সন্ধিকালকে অনেক অর্থবহ করে তুলতে ,যা তার পরবর্তি জীবনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্ত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে ।

 সেক্স এডুকেশন এখনো আমদের সমাজে একটা ট্যাবো ,তাই সময় এসেছে কথা বলার ,নিজে জানার এবং অপরকে জানানোর ! কেনোনা  নিজের শারীরিক এবং মানষিক পরিবর্তন  এর বিজ্ঞান্সম্মত কারনকে বাদ দিয়ে , নিজেকে কিভাবে জানবো? নিজেকে জানো ,বদলে যাও এবং বদলে দাও ।