আজ বলবো অনেক অনেক দিন  আগের  কথা ।যখন বিদ্যুৎ আবিস্কার হয়নি । মানুষ গুহায় বাস করত । তখন সন্ধ্যা নামার আগেই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার খাবার এবং শিকারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ত। খাবার সংগ্রহ করার পর তারা খেতো।তার মানে তাদের রাতের খাবারের পর একটা দীর্ঘ বিরতি থাকত। বিজ্ঞানের ভাষায় এই জীবন যাত্রাকে বলে Fasting ,আজকে কথা বলব Dry Fasting নিয়ে ।অবিবাহিতদের জন্য পরিবার পরিকল্পনা
আগের দিনের মানুষের এতো রোগ ছিলো না এবং তারা বাচতেনও বেশিদিন। তারা বিজ্ঞানের এই অভিনব Fasting এর কথা হয়তো জানতেন না ,কিন্তু তবুও তাদের জীবনযাত্রায় এর প্রভাব ছিলো ।আজ বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষ Dry Fasting গ্রহন করছেন ।  এই পদ্ধতিতে দুইভাবে Dry Fasting  করা যায়। একটি হলো Soft fasting-তুমি একটি নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত কিছুই খাবেননা,পানিও না ,কিন্তু ব্রাশ বা গোসল করা যাবে। আরেকটি হলো Hard Fasting- যেখানে কিছু তো খাওয়াই যাবে না ,বরং ব্রাশ এবং গোসল ও করতে পারবেননা কারন আমাদের শরীর পানি শোষন করে নেয়। Dry fasting শেষ হলে ফল বা ফলের জুস দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তারপর হাল্কা ভারী   খাবার খেয়ে নেয়া যেতে পারে ।তবে বেশি মসলাযুক্ত,তৈলাক্ত এবং ঝাল খাবার কোনোভাবেই খাওয়া উচিত না এসময়।
আধুনিক বিজ্ঞান আজ Dry Fasting কে  রোগমুক্তির হাতিয়ার বলছে ।কিন্তু ধর্মীয়ভাবে এই প্রথা অনেক আগে থেকেই চলে এসেছে।আমাদের মুসলিম ধর্মে বা অন্য ধর্মেও রোজা রাখার নিয়ম চালু আছে । মুসলিম ধর্মে Dry fasting প্রচলিত যেখানে কিছুই খাওয়া যাবেনা ,আর অন্যান্য ধর্মে  Intermittent Fasting প্রচলিত যেখানে শুধু পানি বা ফল খাওয়া যাবে।তবে উভয় পদ্ধতিই আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে,অনেক রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করতে এবং শরীরে যে ক্ষত বা অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হয় সেটাকে মেরামত করতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা এর সদ্বব্যাবহার করিনা কারন আমরা রোজা ভেঙ্গেই সব ভাজা-পোড়া খাই। বরং রমজান মাসে আমাদের খাবার দাবার আরো বেশি রাজকীয় হয়ে উঠে। তাই ধর্মীয় পূন্য ছাড়াও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে আমাদের এই dry Fasting যথাযথ সুফল বয়ে আনতে পারছেনা।
এবার আসা যাক কেনো এই Dry Fasting উপকারীঃ
১) ক্ষত/প্রদাহ (Inflammation): আমাদের শরীরের অনেক রোগের পেছনের প্রধান কারন হলো ক্ষত বা প্রদাহ।যদিও inflammation হলো আমাদের শরীরের স্বাভাবিক  defense mechanism ,কিন্তু এটি যখন বেশি হয়ে যায়  এবং অনেক দিন ধরে আমাদের শরীরে থাকে ,তখন বিভিন্ন রোগ ধরনের শরীরে বাসা বাধে Dry Fasting সত্যিকার অর্থে এই Inflammation দূর করতে সাহায্য করে।Heart attack, cancer, diabetes এর মতো মরণব্যাধী অসুখের প্রধান কারন হলো Inflammation.সুতরাং ,আপনি যখন কিছু না খেয়ে ,পানি পান না করে Dry Fast করবেন ,আপনার শরীর পানি পাবেনা । তখন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সেইসব Inflamed cell থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাবে।এতে করে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর/বিষাক্ত/দূষিত পদার্থ এবং Inflamed cell কে দূর করতে পারবেন।
২)মেরামত(Healing): আমরা যখন একটু পর পর খেতে থাকি ,আমাদের পরিপাকতন্ত্র অনবরত মেশিনের মত কাজ করতে থাকে ।খাদ্য থেকে প্রাপ্ত উপাদানকে শক্তিতে রুপান্তরিত করে ।কিন্তু একটু  চিন্তা করে দেখুন তো একবার ,একটা মেশিন যদি সারাক্ষন চলতেই থাকে ,এটা আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে থাকে ,নস্ট হতে থাকে।আর তাই dry Fasting এর এই ধারনার মূলে রয়েছে পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়া যাতে করে এটি আমদের শরীরের অন্যান্য অংশে কাজ করে আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে ,আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রন করতে পারে, gut health কে সুস্থ্য রাখতে পারে,রোগের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। আমাদের যখন জ্বর হয়  তখন কিছু খেতে ইচ্ছা করেনা ।আমাদের শরীর আমাদের সিগনাল দেয় ‘আর খেয়োনা’ । কিন্তু আমরা ভুলটা এখানেই করি ,আমরা অসুস্থ হলে মনে করি আরো বেশি খেতে হবে ।আর এজন্যই আমাদের মেডিসিন ছাড়া কোনো অসুখ সহজে কমেনা ।কারন আমরা যখন অনবরত খাওয়ার মধ্যে থাকি ,আমাদের শরীর তখন immune system কে strong করতে পারেনা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারেনা এবং  শরীরের ক্ষত( inflammation/imbalance) কে মেরামত( repair) করতে পারেনা   ,বরং পরিপাকতন্ত্র (digestive system) তখন আমরা যা খাচ্ছি ,সে  খাবার কে শক্তি/energy তে পরিনত করতে ব্যাস্ত থাকে।
৩) Detoxify your gut: অনেক microbes and germs আছে, যেটা আমাদের gut এ থাকার কথা না ।কিন্তু যখন Dry Fast করবেন, তখন পরিপাকতন্ত্র থেকে অনেক ক্ষতিকর পদার্থ নিস্ক্রিয় হয়ে,টয়লেটের মাধ্যমে বা ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে ।সামগ্রিকভাবে এটি আমাদের বিপাক প্রক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে ত্বরান্বিত করে।
৪) শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা (Stronger Immunity): যেহেতু আমরা পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকি,Dry Fasting এর সময় আমাদের শরীর কোনো পানি পায় না  । তখন আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে আশেপাশের পরিবেশ থেকে Atmospheric water, nitrogen, carbon dioxide গ্রহন করি ।তাছাড়া আমাদের শরীর নতুন করে অ্যামাইনো এসিড তৈরী করে যা আমাদের শরীরে সুস্থ্য কোষ তৈরী করে এবং আমাদের Immune system কে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আরো বেশী শক্তিশালী করে তুলে।
৫)Insulin sensitivity তৈরী করেঃ রক্তে সুগার এর পরিমান নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং insulin resistance কে  ভালো করে। এর  ফলে শরীরে পরিমিত পরিমানে ইন্সুলিন থাকে এবং সেটি রক্ত থেকে সুগার কে বিভিন্ন কোষে শক্তি হিসেবে পৌছে দেয়।এতে করে আমরা যে খাবার খাচ্ছি সেটা ভালোভাবে metabolized হয়। এর ফলে টাইপ-২ ডায়েবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং যাদের ডায়বেটিস আছে তাদের ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখে ।
৬)রক্তে খারাপ কোলেস্ট্রেরল (LDL) এর পরিমান কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের সাহায্য করে।
৭) এভাবে নির্দিষ্ঠ সময় পর্যন্ত কোনো কিছু না খেয়ে থাকলে, ব্রেইনে নার্ভ সেলের সংখ্যা বৃদ্ধ্বি করে ।এতে করে নিউরো ডিজেনারেটিভ (যেমন -পারকিনসন বা এলজাইমার ডিজিস) রোগের সম্ভাবনা কমায়।
8) শরীরে গ্রোথ হরমোন পরিমিত পরিমানে নির্গত করে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক
রোজা রাখার পর বা অনেকক্ষন না খেয়ে থাকার পর কিভাবে খেতে হবে(How to break the DRY-FAST)
Intermittent Fasting এর মতোই Dry Fasting ১৬ ঘন্টা করা যায়। শুধু পার্থক্য হলো, Intermittent Fasting পানি খেতে পারবো, আর Dry Fasting এ কিছুই খাওয়া যাবেনা, পানি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই । রাত সাতটায় রাতের খাবার সেরে ফেলে এই Dry Fasting শুরু করা যেতে পারে। প্রথমে কস্ট হলে বার ঘন্টা করা যেতে পারে। এরপর আস্তে আস্তে সময় বাড়ানো যেতে পারে। চাইলে মাসে একদিন করতে পারবেন  ,অথবা চারদিন করতে পারো ,এটা সম্পুর্ন শারীরিক অবস্থা এবং নিজের  ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে কোনো ধরাবাধা নিয়ম থাকা উচিত না। মনের এবং শরীরের  কথা শোনতে হবে । অসুস্থ্য না থাকলেও,যারা সুস্থ্য আছেন তাদের জন্যও এটি খুব উপকারী ।তবে স্বাস্থ্যকর খাবারনা খেলে এই “না খেয়ে থাকার” উপকারীতা আমরা পাবোনা ।তাই কি খাচ্ছি ,কিভাবে খাচ্ছি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Advantages of dry fasting:  এই inexpensive পদ্ধতিতে আমরা আমাদের বয়স কে আরো উজ্জল করে তুলতে পারি। তাই মার্কেট থেকে ক্ষতিকর প্রডাক্ট না কিনে, Dry fasting কে anti-aging এর একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করতে পারি। এটি ওজন নিয়ন্ত্রন করতেও সক্ষম ।আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।শরীরের অনেক ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে। আমাদের শরীর mathematics না, এটি মনের কথা বেশি শুনে ।তাই আমরা চাইলেই একটি সুস্থ্য এবং স্বাস্থ্যকর জীবন ধারার অভ্যাস করতে পারি । তবে যারা নিয়মিত কোনো অসুখের কারনে মেডিসিন খাচ্ছেন অথবা অন্যান্য শারীরিক এবং মানষিক সমস্যায় জর্জরিত,তারা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে Dry fast করবেন। আর যারা মাশাল্লাহ  সুস্থ্য স্বাভাবিক  আছেন , প্রতি সপ্তাহে এই ড্রাই ফাস্ট করতে পারবেন।
আর তাই আজ বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষ ‘সুস্থ জীবন-যাপন’ এবং স্বাভাবিকভাবে রোগ মুক্তির লক্ষ্যে Fasting কে বেচে নিয়েছে। আমরা   কয়দিন FAST করবো ,সেটা আমাদের ইচ্ছা শক্তি,শারীরিক অবস্থা  এবং অভ্যাসের উপর নির্ভর করে ,তবে শুরু করাটাই প্রধান। বিভিন্ন গবেষনা বলে ,টানা তিন দিন FAST করা বেশি উপকারী। কেউ যদি ওজন কমানোর জন্য fasting কে বেছে নিতে চান ,আমি দুঃখিত ,এই আর্টিক্যালটি আপনার জন্য নয়।কারন Fasting এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো শরীরেরর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং সামগ্রিকভাবে একটি স্বাস্থ্যপূর্ন জীবনযাত্রার অভ্যাস গড়ে তোলা।
তবে হ্যা Fasting ওজন নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে ,তবে ওজন যদি কমাতে চান তাহলে ‘না খাওয়ার’ বদলে খাদ্যতালিকায় সব পুস্টি উপাদান পরিমিত পরিমানে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে  হবে ,ঠিকমত ঘুমাতে এবং ব্যায়াম করতে হবে ,সব ধরনের নেতিবাচকতা বাদ দিতে হবে, নিজেকে অনেক ভালোবাসতে হবে, নিজের এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সহনশীল হতে হবে এবং আশেপাশের সবকিছুর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।কারন সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন না আনলে ,শারীরিক এবং মানষিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব না ।তাই শুধুমাত্র ওজন কমানোর উপর গুরুত্ত্ব না দিয়ে ,একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় অভস্ত্য হোন ।এতে করে সুস্থ থাকতে পারবেন এবং ওজন নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।ওজন কমানোর জন্য আসলে  fasting না, এটা মাথায় রাখবেন কারণ এই ভুল অনেকেই করে থাকেন।

আর রোজার উপকারীতা বা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না  খেয়ে থাকার উপকারীতা  আপনি তখনই পাবেন ,যখন রোজা ভাঙ্গার পর স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন এবং জীবনযাত্রা স্বাস্থ্যকর হবে । আর বেশি সময় না খেয়ে থাকলে অনেকের এসিডিটির সমস্যা হয় ,তাই এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন  যে রোজার মাস ছাড়া অন্য সময়ে রোজা রাখলে ,সেটা যেনো কোন স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরী না করে । আর যাদের বিভিন্ন শারীরিক এবং মানষিক রোগ আছে ,তারা রোজার রাখার আগে অবশ্যই একজন চিকিসকের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধ্বান্ত নিবেন ,কিভাবে রোজা রাখবেন ,কিভাবে খেতে হবে, জীবনযাত্রা কেমন হবে ।

না খেয়ে থাকার উপকারীতা (Intermittent Fasting- The key to heathy lifestyle)

 

“নেতিবাচকতা”-স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর