স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল – একথাটা আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে শুনে বড় হয়েছি। তবে শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্য ও আমাদের জীবনের একটি খুবই গুরত্ত্বপুর্ন অংশ ।আমাদের শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে অথবা আমরা ব্যাথা পেলে ডাক্তারের কাছে যাই ,কিন্তু আমাদের মন ভালো না থাকলে  অথবা বিষন্ন থাকলে অনেক সময় আমরা কারো সাথে শেয়ার করতেই পারিনা ,বুঝে উঠতে পারিনা কি হয়েছে ,কি করা উচিত। এতে করে আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনে যেমন অনেক  ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ,ঠিক তেমনি কর্মক্ষেত্রেও অনেক প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ,সারা বিশ্বে  প্রায় ত্রিশ কোটিরও বেশি মানুষ বিষন্নতায় ভোগছেন ।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ মেন্টাল হ্যালথ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্মস্থলে প্রতি পাচজনের একজন মানষিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সারা বিশ্বে প্রায় তিনশ মিলিয়ন মানুষ মানষিক রোগে আক্রান্ত,আর বাংলাদেশে প্রায় ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষক রোগে ভোগছে, এবং শিশু কিশোরদের ১৮ শতাংশ মানষীক সমস্যায় ভোগছে।আর দুইহাজার ষোল সালের কমিউনিটি জরীপ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এর হাড় বেড়ে দাড়িয়েছে বত্রিশ শতাংশ । মন যেহেতু আছে ,সেহেতু মনের আকাশে মেঘ জমাটাই স্বাভাবিক।
 কিন্তু মনের পরিচর্যা করা,,আশেপাশের বিরূপ পরিবেশেও নিজেকে মানিয়ে নেয়া ,জীবন সংগ্রামে নিজেকে তৈরী করে এগিয়ে চলাটাই মানসিক বল। মন খারাপের এই অজানা জগতে আমরা অনেক সময় বিষন্নতায়(depression) ভুগতে ভুগতে নিজের অজান্তেই নিজের অনেক ক্ষতি করি ফেলি । এর বাইরেও অনেকের মানষিক রোগ আছে , এই যেমন –বাইপোলার ডিসঅর্ডার  ,সৃজোফেনিয়া ইত্যাদি। যখন আমরা এসব রোগে আক্রান্ত হই , তখন কিন্তু আমাদের অবস্থা শুধুমাত্র আর মন খারাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা। এই সময়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ,মেডিসিন নেওয়া এবং একটা নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত ট্রিট্মেমেন্ট নেয়া বাধ্যতামুলক ।আর সবচেয়ে বড় সমস্যা এখানেই । আমরা মানষিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এতটা সচেতন না ।সমাজেও এর গ্রহনযোগ্যতা কম। এবার আসি মূল কথায়। এই মানষিক সমস্যা বংশগত কারনেও হতে পারে ,আবার সামাজিক কারনেও হতে পারে। কারন যাই হোক না কেনো, আমরা যদি একদম নির্দিস্টভাবে সমস্যা সনাক্ত করতে যাই ,তাহলে আমাদের আর্থ–সামাজিক বাধাকে ছাপিয়ে আমাদের ত্রুটিপূর্ন বেড়ে উঠা  মানষিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পেছেনে একটি অন্যতম প্রধান কারন।
বয়ঃসন্ধিকাল ,আমাদের ত্রুটিপূর্ন বেড়ে উঠা এবং মানষিক স্বাস্থ্যঃ
ছোটোবেলা থেকে আমরা আসলে নিজের ব্যাপারে কতটুকু জানি? আমাদেরকে চাকরির ইন্টারভিঊতে যখন বলা হয়, ‘নিজের ব্যাপারে বল” ,তখন হয়তো আমরা আমাদের কি কি এবিলিটি আছে ,কি কি কাজ করেছি সেটাকে খুব সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারি । কিন্তু নিজেকে জানার প্রথম ধাপ হলো নিজের শরীর নিয়ে জানা ,শরীরের প্রত্যেকটি অংগ–প্রত্যংগ সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানা , নিজের হরমোন এর সাথে সাথে   শারিরীক পরিবর্তন এবং এর সাথে কিভাবে আমাদের মানষিক স্বাস্থ্য কিভাবে আবর্তিত এবং পরিবর্তিত হয়, এসব কিছু নিয়ে জানা । এসব জ্ঞান আমাদের ক্যারিয়ার বা চাকরির জন্য দরকার নেই ,কিন্তু আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনে খুবই গুররুত্ত্বপূর্ন। আমরা যখন নিজের ব্যাপারে জানি ,তখন আমাদের আত্ত্ববিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। আমরা অনেক কুসংস্কারকে এড়িয়ে চলতে পারি। আর তাই বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই যদি সেক্স এডুকেশন নিয়ে সবাই সঠিকভাবে জানতে পারে,তাহলেই নিজের ব্যাপারে জানা হয়ে যায় এবং অন্যকে সচেতন করা সম্ভব হয় ।
 কেননা  বয়ঃসন্ধিকালে আমরা অনেক বেশি কোতুহলী থাকি ,তাই অনেক প্রশ্ন মনে আসে, পরিবারের কারো কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে আমরা দ্বিতীয়বার আর ভয়ে প্রশ্ন করিনা, অথবা স্কুল এর সিলেবাসে সেক্স এডুকেশন এর কিছু টপিক থাকলেও ,সেটা ঠিকমত সব স্কুলের ক্লাসে পড়ানো হয়না ,তাই আমাদের মধ্যে জড়তা কাজ করে। আর এখন ইন্টারনেটের ব্যাবহার সহজতর হয়ে যাওয়ায় বয়ঃসন্ধিকালে অনেকেই অনেক ভুলে ভরা তথ্য সম্বলিত ভিডিও দেখছে এবং আর্টিকেল পড়ছে। সমবয়সী বন্ধুদের কাছ থেকে ভুল তথ্য জেনে নিচ্ছে। আমাদের সাইবার জগতটাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ।নিজের ভাষায় নিজেকে জানার জন্য তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উপাদান আমাদের ইন্টারনেটে নেই ,অন্তত বয়ঃসন্ধিকালে থাকা শিশু কিশোরদের  জন্য । অনেক সায়েন্টিফিক উপাদান আছে ইন্টারনেটে যা সবার জন বোধগম্য নয় এবং সবার দৃষ্টি আকর্ষন করতেও সক্ষম নয়। আর এভাবেই ছোটোবেলা থেকেই আমরা একটু কম আত্নবিশ্বাস নিয়ে বড় হই ,নিজের ব্যাপারে কম জানি ,ফ্যামিলির সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে পারিনা, কৌতূহল  কাজ করে, জানার চেয়ে ভুল জানি ,প্রশ্ন করতে পারিনা ,নিজের শারীরিক পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারিনা অনেক সময় ,লজ্জা লাগে ,ভয় পাই– আর এভাবেই আমাদের মানষিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে ।
আর এই আমরাই যখন একটু একটু করে পরিনত বয়সের দিকে যাই ,আমাদের মধ্যে অনেক জড়তা কাজ করে,আত্নবিশ্বাসের কমতি হয় ,অনেক কিছু জানতে পারিনা ,প্রশ্ন মনে মনেই থেকে যায় -আর এভাবেই আমাদের সারাজীবন পার হয়ে যায়। মানষিক স্বাস্থ্যেকে উপেক্ষা করে যাবার কোনো উপায়ই নেই । শিশু কিশোরদের  পরিপুর্ন বিকাশে এবং তার পরবর্তী জীবনের চলার পথকে সহজতর করে দিতে আমাদের খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।তাদের নিজের ব্যাপারে জানতে, বুঝতে এবং শিখতে দিতে হবে। তাই  স্কুল-কলেজের সিলেবাসকে দোষারোপ না করে ,আসুন আমরা আমাদের সন্তান, ছোট ভাই-বোন, জুনিয়রদের সাথে সেক্স এডুকেশন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি এবং তাদের মানষিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা করতে সাহায্য করি । #আমরা_করবো_জয়