আমাদের বাংলাদেশ এখন  সবচেয়ে বেশী  সুবিধাজনক অবস্থানে আছে কারন আমাদের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুন সমাজ ।এই ইতিবাচক দিক অনেক দেশেই নেই । এই তরুন সমাজ যেরকম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ,বিশ্ব মঞ্চে বারবার বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে চলেছে ,ঠিক তেমনি এই তরুন সমাজের একটি বড় অংশ অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিতও হচ্ছে ,অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে ।

 

আমাদের  সবার আর্থ-সামাজিক অবস্থা এক না । কিন্তু তারপরেও আমরা বাংলাদেশে একে অপরের পাশে দাড়াই আর এটাই আমাদের বৈশিষ্ঠ্য। কেউ হয়তো সুযোগ সুবিধা একটু বেশি পায় ,তাই এগিয়ে যেতে পারে । আর কেউ হয়তো  সুযোগ সুবিধার অভাবে নিজেদের জীবনকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিতে পারছেনা । আমাদের সব ভালো সুযোগ সুবিধা ঢাকা এবং বড় শহর কেন্দ্রীক হওয়ার কারনে দেখা গেছে যে ,যেসব ছাত্রছাত্রীরা ঢাকামুখী অথবা বড় শহরে এসে পড়াশোনা করতে পারছে ,তারাই ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাচ্ছে্ন । যেহেতু আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক সহোগিতা সবার সমান না ,তাই জেলা উপজেলা পর্যায়ে  অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা মেধা থাকা সত্ত্বেও ভাল ক্যারিয়ার গড়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন । দেশ এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে স্থানীয়   নেতৃত্ত্বে দক্ষ  তরুন তৈরী করতে হবে । সৃস্টিকর্তা সবাইকে কিছুনা কিছু মেধা দিয়ে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এই মেধাকে কাজে লাগাতে হলে বিভিন্ন দায়িত্ত্বে নিয়োজিত গুরুপূর্ন ব্যাক্তিদের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি ।

(Published in the weekly chayeer desh ,Sreemangal, Moulvibajar)

এরকম সমস্যা নিয়ে লিখতে  গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্টার লিখতে পারবো । অনেক সমস্যা  চিহ্নিত করা  হয়েছে । এবার শুরূ হোক সমাধান যাত্রা । দেশ পরিবর্তন করে ফেলবো – এই কথা বলাটা খুব সহজ কিন্তু কাজ করতে গেলে বোঝা যায় যে কত সমস্যা ,কিন্তু পরিবর্তন অসম্ভবপর নয় । দেশ বদলাতে হলে স্থানীয়ভাবে দক্ষ তরুন  নেতৃত্ত্ব তৈরী করতে হবে ,এর বিকল্প অন্য কিছু আমি এই মুহুর্তে  দেখছিনা । আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের পথে হেটে চলেছি । কিছুদিন পরে দুই হাজার একুশ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি । জেলা –উপাজেলা পর্যায়ের তরুন তরুনীরা কি নিজেদের   তৈরী করতে পারছে এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য? অবশ্যই সবাই পারছেনা। এটা তাদের দোষ না । তাদের যারা পথা দেখাবেন ,তাদেরকে অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে । সম্পূর্ন দেশ বদলাতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ এবং সাহসী  তরূন নেতৃত্ব তৈরী করতেই হবে ,এছাড়া আমাদের আর উত্তরনের অন্য কোনো উপায় নেই । জরূরী না সবাইকে ঢাকাতেই যেতে হবে ,চাইলেই ঢাকার অনেক সুযোগ –সুবিধা নিজের এলাকায় নিয়ে আসা যেতে পারে , শুধু একটু  ভালো কাজ করারা ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট ।

সমাধান যাত্রায় আমাদের  করনীয়ঃ

সামাজিক পরিবর্তন  :

যেসব তরুনরা একটু ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে  পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন এবং পেশাগত জীবনে এগিয়ে যাচ্ছেন ,তাদের দায়িত্ত্ব নিজের গ্রামের বাড়িতে/নিজের এলাকাতে ফিরে আসা এবং স্থানীয় তরুনদের নিয়ে কাজ করা । যে যেখানেই যে কোনো পেশাতেই থাকেন না কেনো , মাসে একদিনও যদি নিজের এলাকায় আসেন ,এলাকার তরুন্দের নিয়ে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ শুরু করেন ,তাহলে সবাই কাজ শিখবে । এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পরে আমাদের চাকরির বাজারে নতুন  এমন ৩৭% চাকরি  আসবে ,যা এখনকার চাকরির বাজারে অনুপস্থিত ।এই নতুন পরিবেশে শুধু বড় শহরে পড়াশোনা করা এবং কাজ করতে পারা তরুনরাই নিজেদের টিকিয়ে রাখতে এবং  এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে ,কিন্তু এতে করে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবর্তন সম্ভব নয় । তাই যারা ছোট শহর থেকে আজ অনেক বড় পরিশরে কাজ করছেন ,তাদের দায়িত্ত্ব নিজের এলাকায় একটু হলেও অবদান রাখা ।আপনি যখন বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে এলাকায় কাজ করবেন ,তখন সেখানের তরুনরা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারবে যা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য তাদেরকে উপযুক্তভাবে তৈরী করে নিতে পারবে । এভাবে কাজ করতে গিয়ে কেউ হয়তো খুব সুন্দর করে কথা বলা শিখে নিবে ,কিভাবে একটা প্রজেক্ট প্রপোজাল লিখতে হয় সেটা শিখে  যাবে ,কিভাবে তহবিল(ফান্ড)  সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন প্রাইভেট  কোম্পানি  এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হয় সেটা জেনে যাবে , কিভাবে নিজের যোগাযোগ দক্ষতাকে আরো সুন্দর করা যায় যেটা জেনে যাবে ,বাংলা এবং ইংরেজী উভয় ভাষায় দক্ষতা বেড়ে যাবে ,আর সর্বোপুরি নিজের আত্ত্ববিশ্বাস বাড়াতে সহ-শিক্ষা কার্যক্রম এভাবেই আমাদের তরুনদের ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মানে আরো দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবে  । নিজের একটি ছোট আইডিয়া অথবা  ছোট প্রজেক্ট ই  একদিন একজন সফল তরুন উদ্যোক্তা তৈরী করতে সম্ভব । একটি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের অনেক তরুন উদ্যোক্তা তৈরী করতে হবে ।যেখানে মা-বাবা শুধু ছেলে মেয়েদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার –ব্যারিস্টার বানাতে চান, সেখানে আমাদের চলার পথ এখন হয়তো একটু কঠিন কিন্তু অসম্ভবপর নয়। বাংলাদেশে এখন অনেক সফল তরুন উদ্যোক্তা তৈরী হচ্ছে , তবে  সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ।

রাজনৈতিক পরিবর্তন :

সামাজিক প্রেক্ষাপটের বাইরেও আমাদের আছে রাজনৈতিক অবস্থান । আমি বিশ্বাস করি ,একটি দেশের সবকিছু রাজনৈতিক অবস্থা দ্বারা আবর্তিত  এবং পরিবর্তিত হয় । কিন্তু আমার প্রজন্ম আজ রাজনীতিকে ঘৃনা করে। এর পেছনে যথেষ্ঠ কারনও আছে ,সেই আলোচনায় যাওয়ার মত যোগ্যতা এখনো হইনি আমার, তাই এটা নিয়ে আর কথা বাড়ালাম না । সবাই রাজনীতিতে আসবে না ,আসার দরকার ও নেই কিন্তু আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে পারি । “সব সুযোগ সুবিধা ঢাকায়” – আমি এটি বিশ্বাস করতে এবং মানতে রাজি নই । আমরা যাদেরকে ভোট দিয়ে আমাদের জনগনের প্রতিনিধি বানাই ,তাদের দায়িত্ত্ব বিকেন্দ্রিকরনে মনযোগী হওয়া । নিজেরা  সেইভাবে প্রজেক্ট ডিজাইন করতে সমস্যা হলে ,আমরা জেলা উপজেলা পর্যায়ে এক্সপার্ট নিয়ে আসতে পারবো  । আমি আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ,আমাদের বর্তমান   সরকার  তরুন উদ্যোক্তা তৈরীতে এখন অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে ,কিন্তু সেই ফান্ড নিয়ে এসে নিজের একটি ছোট উদ্যোগ থেকে বড় পরিসরে কাজ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা লাভের জন্য আমাদের জেলা উপজেলা পর্যায়ে দক্ষ তরুন তৈরী করতে হবে ।আর এজন্যই আমাদের প্রজেক্ট ভিত্তিক রাজনীতি চালু করা এখন সময়ের দাবী । কারন স্থানীয় রাজনীতিতে তরুন্দের একটা বড় অংশ জড়িয়ে আছে ,তাদের দক্ষতাই হতে পারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাতিয়ার।

আজ যারা রাজনীতিতে আছেন ,তারা যদি তরুনদের  বলেন , “ আসো, আমাদের ছাত্র সংগঠনে এসে যোগ দাও” ,অনেকেই আসবেনা ,আমি নিজেও আসবোনা । কিন্তু আমাদের যদি বলা হয়,  “আসো পরিবেশে দুষন নিয়ে কাজ করি , বাল্য বিবাহ নিয়ে কাজ করি ,তরুন উদ্যোক্তা তৈরীর লক্ষ্যে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কর্মাশালায় যোগ দাও , স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করো ,ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করো ’’, তাহলে আমরা সবাই আসবো । রাজনৈতিক দল যারা যার ,তবে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে “সরকার” আমার । আমরা এই একটা জায়গাতেই ভুল করি , রাজনৈতিক দলের সাথে সরকারকে মিলিয়ে ফেলি । তাই বিচ্ছিন্নভাবে কাজ হচ্ছে ,কিন্তু সবাই একসাথে হয়ে  কাজ করলে ছোটো পরিসরে আমার গ্রাম ,আমার শহর পরিবর্তন হবে ,এভাবেই সমগ্র দেশ বদলাবে। যারা জনগনের প্রতিনিধি , তাদের উচিত – “উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ঘর-বাড়ি,স্কুল-কলেজ ,রাস্তা ঘাট নির্মান”   এর বাইরে এসে দক্ষ তরুন নেতৃত্ত্ব তৈরীতে এগিয়ে আসা। কারন আমি এই উন্নয়নের মডেল সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে, আমি  বিশ্বাস নাও করতে পারি । কারন আমি জন্মের পর থেকে ইলেক্ট্রিসিটি ,গ্যাসের চুলা দেখে বড় হয়েছি ,তাই আমাকে এসব উন্নয়নের মডেল দেখালে অস্বস্থিতে পড়ি । তাই উন্নয়নটা হতে হবে অনেক রকমের । অবশ্যই একটি দেশের উন্নয়নের জন্য এসব দরকার ,তবে আপনাদের মনে রাখতে হবে   চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কিছুদিন পড়েই । আমাদের বর্তমান  সরকারেন নির্বাচনী ইশতেহার এতো সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে ,কিন্তু  এটাকে অন্যভাবে স্থানীয় পর্যায়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। আমি এই ইশতেহারের  প্রত্যেকটা  পয়েন্ট পড়েছি ,আমার মনে হয়েছে এই ইশতেহার আগামী ৫ বছর না ,৫০ বছরের উপযোগী  ।  স্থানীয় পর্যায়ে তরুনদের বিভিন্ন ট্রেনিং এর মাধ্যমে  দক্ষ করে তুলে ,তাদের সরকারী এবং বেসরকারী বিভিন্ন তহবিলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, যত বেশি তরুন উদ্যোক্তা তৈরী করতে পারবো ,দেশ এর অর্থনীতি  তত ভারসাম্য পাবে ,দেশ আরোও এগিয়ে যাবে ।

 

কথায় আর কাজে মিল থাকা চাইঃ

বড় বড় মঞ্চে আমরা খুব সহজেই বলে ফেলতে পারি , ‘ দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলাম ’। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে চাই না। সমাধান একটাই – স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ তরুন নেতৃত্ত্ব তৈরী করে দিতে হবে ,তারাই এই সিস্টেমকে কঠিন করে তুলবে তাদের জন্য ,যাদের কথায় আর কাজে মিল নাই,যারা দায়িত্ত্বপ্রাপ্ত থাকা অবস্থায় দায়িত্ত্বের অবহেলা করেন ,যারা নতুন প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছেন না । এবার আসি মাদকের কথায়   । মাদক অথবা অনৈতিক কার্যক্রম কমাতে সবার সম্মিলিত প্রচেস্টার প্রয়োজন , মঞ্চে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ ঘোষনা না করে  একটি স্থানীয় রিহ্যাবিটিলেশন সেন্টার করে দিন ,ঢাকার সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে নিজের এলাকাতে নিয়ে আসুন,স্কুল -কলেজে গিয়ে শিক্ষকদেরকে তাদের ছাত্রছাত্রীর প্রতি সদয় হতে বলুন ,মা-বাবাদের জন্য কর্মশালার ব্যাবস্থা  করুন যাতে তারা তাদের ছেলে মেয়েদের মানষিক স্বাস্থ্যর প্রতি যত্নশীল হতে পারেন , সরকারী সব সুযোগ সুবিধা তরুনদের সামনে তুলে ধরুন , খুর্দ্র ঋন এর সুযোগ সুবিধা তরুনদের জন্য উন্মুক্ত করে দিন ,তাদের কে ট্রেনিং দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে নিজের এলাকায় নিয়ে আসুন , আপনার রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কেউ যদি মাদক অথবা স্কুল কলেজের বাচ্চাদের  সাথে প্রতারনা করে তাদের জীবনকে ধংসের দিকে ঠেলে দেয় ,তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিন ,তাদের শাস্তি নয় বরং বুঝিয়ে পরিত্রানের ব্যাবস্থা করুন। আমরা আর কোনো কিছুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে/দেখতে চাইনা ,আমরা সবার সম্মিলিত প্রচেস্টায়  সমাধান যাত্রা চাই।

হয়তো যে অনৈতিক কাজ ও প্রতারনা  করে তরুন সমাজকে এভাবে ধংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ,সেও কোনো না কোনভাবে অন্যের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে কিশোর বয়সে । তাই পুটি মাছ নিয়ে না খেলে যেসব রাঘব –বোয়ালরা  সারা বাংলাদেশে এসবের সাথে জড়িত ,তাদের থামাতেই আমরা স্থানীয় পর্যায়ে চাই দক্ষ ,সৎ এবং সাহসী তরুন নেতৃত্ব, যারা “লোক দেখানো সমাজ সেবক , মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে রাখা স্বার্থান্বেসী ,ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং দুর্নিতীবাজদের ” তোষামোদ করা বাদ দিয়ে সত্য এবং সুন্দরের পথে দেশকে পরিচালিত করবে ।

আমার চোখে সমাধান যাত্রা :

আমি জানি যারা এই চায়ের দেশ পত্রিকাটি পড়েন ,তারা আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় এবং অনেক অভিজ্ঞ, তাই ফুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃস্টিতে দেখবেন । আমি বিশ্বাস করি ,আমাদের প্রজন্ম ইতিহাস পড়তে চায় না ,গড়তে চায় ।তাই আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় কিভাবে স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ্য তরুন নেতৃত্ত্ব তৈরী করা যাবে ,সেটা আপনাদের সবার সামনে তুলে ধরছি । সারাবিশ্বে  শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ  নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে । এরই ধারবাহিকতায় “মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট  গোলস”(এমডিজিএস) নামে জাতিসংঘ তার অন্তর্ভুক্ত দেশসমুহের জন্য আটটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল ,এবং বাংলাদেশ সরকার সব সরকারী এবং  বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিলো ।সেই লক্ষ্যমাত্রা শেষ হয়েছে । এরপর ২০১৫ সালে জাতিসংঘ “ সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজিএস) ” নামে আরো সতেরটা নতুন লক্ষ মাত্রা দেয় । এ বিষয়ে জানতে হলে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন । আর এই এসডিজি যখন শুরু হয় ,আমি ২০১৫ সালে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা –তিন ( SDG 3- Good Health and Well-being)  নিয়ে কাজ করা শুরু করি ,এখনও এটা নিয়েই কাজ করছি । আমাদের দেশে এখন এসডিজি নিয়ে অনেক সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা কাজ করছে এবং অনেক তহবিলও আছে ,তাই কাজ করার ক্ষেত্রে সেরকম বাধা নেই। তাই আমরা যদি আমাদের এলাকায় এসব প্রজেক্ট নিয়ে আসি   অথবা নিজেরাই প্রজেক্ট ডিজাইন করে তরুন্দের নিয়ে কাজ শুরু করি ,তাহলে আমাদের শহর আরো বেশি বসবাস উপযোগী হবে ,তরুনরা এসব প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফলভাবে কাজ করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করে নিতে পারবে , স্নাতক শেষে খালি সিভি নিয়ে চাকরির বাজারে ঘুরতে হবেনা ,তরুন উদ্যোক্তা তৈরী হবে এবং সর্বোপুরী তরুনরা অনেক অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে ।

অনেক সমস্যা আমাদের আশেপাশে ,তবে আমাদের দেশে যে সমাধান যাত্রা  ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ,সেটাকে স্থানীয় পর্যায়ে আরো ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে  জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরাই সাহায্য করতে পারি । আমার দেশের সরকারকে সাহায্য করার দায়িত্ত্ব অবশ্যই আমার।

আর তরুনরা যারা এই লিখাটি পড়বে  ,তাদের উদ্দ্যেশ্যে একটা কথাই বলতে চাই “ মন ছোট করা যাবে না , যে যেই আর্থ-সামাজিক অবস্থানেই থাকোনা কেনো ,অনেক বড় করে স্বপ্ন দেখতে হবে , আসছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে “তুমি কোথায় পড়াশোনা করেছো” সেটার চেয়ে বেশী জরুরী “তোমার কতটুকু দক্ষতা আছে” । নিজের দক্ষতা বাড়াতে ছাত্র অবস্থায় কাজ শুরু করে দাও এখন থেকেই ।ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা যেহেতু বেড়েছে ,তাই সমগ্র বিশ্ব এখন তোমার হাতের মুঠোয় । তুমি চাইলেই একটা গ্রামে বসেও অনলাইনে জব করতে পারো ।  সকাল নয়টায় অফিসে যাবো আর বিকাল পাচটায় বের হবো- ওই দিন এখন শেষ । কিছুদিন পর মানুষের কাজ রোবট করবে । তাই ইন্টারনেটের সদ ব্যাবহার করে নিজেকে গড়ে তুলো,নিজের দক্ষতা বাড়াও। তুমি কোন পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছো ,কোথায় পড়াশোনা করেছো , তোমার আর্থ-সামাজিক অবস্থা কতটা শক্তিশালী –চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে আমাদের  এসব  দরকার নেই ।তোমার দক্ষতা এবং সততাই হবে   ভবিষ্যত  বাংলাদেশ  বিনির্মানের হাতিয়ার ।