সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পারিবারিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কখনোই পরিবর্তন করা যাবে না ।একটা শিশুর পরিপুর্নভাবে বেড়ে উঠার পেছনে স্কুল কলেজের চেয়ে বেশি গুরুত্ত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার। আর বয়সন্ধিকালের সময়টা আমাদের জীবনে আছে বলেই আমাদের মানষিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হতে হবে ,শুধু শারিরীক স্বাস্থ্যকেই গুরুত্ত্ব দিলে চলবেনা । কেনো মানষিক স্বাস্থ্যেকে নিশ্চিত করতে হবে ,আমরা জানি কি ? জানলেও পরিবারের ছোটোদের সাথে গল্পের মত করে খোলামেলা আলোচনা করি কি ? জানি,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তরটা হবে “না” ।
সাধারনত ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সে বয়সন্ধিকাল শুরু হয় ,আর সাথে থাকে অনেক শারিরীক এবং মানষিক পরিবর্তন  ।  তখন “অনেকগুলো না জানা’’ আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ,অজানাকে জানার আর অদেখাকে দেখার যোদ্ধে সবাই কি জয়ী হতে পারে ?নাকি অনেক ভুল তথ্যের কারনে বয়সন্ধিকাল জয়ের না হয়ে , ভয়ের হয় ? এই সময়টাতে মানষিক ভাবেই ভেঙ্গে পরে অনেক কিশোর-কিশোরী । অনেক কিছুই নতুন। নিজেকে আপন মনে করবে কিভাবে ?নিজের এতো শারীরিক এবং মানষিক পরিবর্তন বারবার থামিয়ে দেয় । কেউ বুঝিয়ে বলে না ‘ যা ঘটে যাচ্ছে তোমার সাথে ,সবই প্রাকৃতিক’ –আর এসবের পেছনে রয়েছে সেক্স হরমোনের ভুমিকা । একটা ছেলে বা মেয়ে বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের পরিবর্তনের  শিকার হয় ,এই সব শারীরিক এবং মানষিক পরিবর্তনের কারনেই আমরা একটা ছেলে অথবা মেয়েকে আলাদা করতে পারি ।
এই যেমন মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক , ব্রেস্ট এর বেড়ে ওঠা, ওজন বেড়ে যাওয়া , অনিয়মিত মাসিক  অথবা পেলভিক এরিয়াতে লোম গজানো, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ওয়েট ড্রিম(স্বপ্ন দোষ), কন্ঠস্বর বদলে যাওয়া ,দাড়ি-গোফ গজানো ,পেনিস এর সাইজ বড় হয়ে যাওয়া ,কারো কারো ক্ষেত্রে বেশি  ইজাকুনলেশন হওয়া ,বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন অনুভব করা , কারনে অকারনে স্বাভাবিক কোনো ঘটনায় রেগে যাওয়ার মত ঘটনা এই বয়সে খুবই স্বাভাবিক । এই স্বাভাবিক বিষয়গুলোকেই আমাদের সমাজ, পরিবার এবং স্কুল –কলেজ ব্যাবস্থা অস্বাভাবিক করে তুলেছে । আমরা ছোটোদের বুঝিয়ে বলি না যে “ তুমি যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছো ,এটাই স্বাভাবিক ,এটাই সৃষ্টির সৃজনশীলতা” । একটা মানুষ বেড়ে ওঠার সময়টাতে তার মনে অনেক ধরনের প্রশ্নের জমা হয় । সে পরিবারকেই সেই সময়টাতে সবচেয়ে  বেশি কাছে পায় , কিন্তু আমরা বড়রা তাদের কে বুঝিয়ে বলিনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। একটা উঠতি বয়সের বাচ্চা যখন  তার মা-বাবা কে প্রশ্ন করে , “আমি এই পৃথিবীতে কিভাবে এসেছি , অথবা টিভিতে স্যানিটারি প্যাড ,কনডম ,জন্মবিরতিকরন পিল এর বিজ্ঞাপন দেখে যখন এসব সম্পর্কে  জানতে চায় ,তখনও আমরা বড়রা এড়িয়ে যাই ,”এসব বড়দের বিষয় তুমি বোঝবেনা ”, তোমার এতো সাহস এসব নিয়ে প্রশ্ন করো ’’ টাইপ কথা বলে । এতে করে ছোটরা ভয়েতে আর পরিবারের কাছে জানতে চায় না ,কথা বলতে বাধ্য হয় সমবয়সী বন্ধুদের সাথে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার জানার চেয়ে ভুল জানে । আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারনে এখন অনেক উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা অনেক কিছু জানার জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নিচ্ছে । কিন্তু বলাবাহুল্য ,আমাদের এখনো সেই অর্থে বিশ্বাসযোগ্য  কোনো ওয়েবসাইট নেই ,যেখানে কিশোর-কিশোরীরা নিজের মত করে জানতে ,বোঝতে এবং দেখতে পারবে ।
আর যেসব তথ্যপূর্ন আর্টিক্যাল এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ভিডিও ইন্টারনেটে আছে ,যেসব দেখে অথবা পড়ে জ্ঞান লাভ করার মত, ক্ষমতা , উৎসাহ ও উদ্দীপনা উঠতি বয়সের তরুন-তরুনীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই না থাকার কথা ।আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের মাতৃভাষায় সে অর্থে কোনো ইন্টারনেট ভিত্তিক বিজ্জানসম্মত নির্ভর  উৎস নেই ,যেখান থেকে আমরা নিজেদের ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারব। তাই পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে একটি শিশুর সুস্থ্য ,সুন্দর এবং পরিপূর্ন মানষিক বিকাশের জন্য । আপনি যদি আঠারো উর্ধো হয়ে থাকেন এবং এই মুহুর্তে এই আর্টিক্যালটি পড়ে থাকেন ,তাহলে আপনাকেই বলছি , “আপনি প্রস্তুত তো ,আপনার  পরিবারের যারা বয়সন্ধিকালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে অথবা অদূর ভবিষ্যতে আপনি যখন সন্তানের মা/বাবা হবেন , তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে ? নাকি এটা বড়দের ব্যাপার বলে এড়িয়ে গিয়ে আবার ও ভুল করবেন ।  বড়দেরকেও  জানতে হবে এবং ছোটদেরকেও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জানাতে হবে ।
চুপ করে আর কতদিন এই সেক্স এডুকেশনের প্রত্যেক্টা বিষয়কে এখনো সমাজে ট্যাবু বানিয়ে রাখবো ? একটা মেয়েকে যেভাবে মাসিক নিয়ে ধারনা দেয়া  হয় ঠিক তেমনি একটা ছেলেকেও বোঝাতে হবে ,যাতে করে যে বড় হয়ে মাসিক নিয়ে হাসি ঠাট্টা না করে , বোন-বান্ধবী-সহকর্মীর জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে পারে , একটা মেয়েকে যেমন বোঝানো হয় “ তুমি বড় হয়ে যাচ্ছো ,এখন তোমাকে ব্রা পড়ার অভ্যাস করতে হবে ,নিজেকে সামলে রাখতে হবে , ঠিক তেমনি একটা ছেলেকেও তার শারীরিক  এবং মানাষিক পরিবর্তন  চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে যাতে করে যে লজ্জ্বা না পায় ,হীনমন্যতায় না ভোগে ,শুধুমাত্র তার সাথেই  এই পরিবর্তন হচ্ছে ,এমনটা না ভাবে। হ্যা ,আমরা করবো জয়, একসাথেই করবো জয়,  নিজে জেনে এবং অপরকে জানিয়ে। আমাদের মানষিক স্বাস্থ্য ততটাই গুরুত্ত্বপূর্ন ,ঠিক যতটা গুরুত্ত্বপুর্ন আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য। আর আমাদের শারীরিক এবং মানষিক পরিবর্তনের  ব্যাপারে খোলামেলা বিজ্ঞানস্মমত আলোচনার অভাবে আমাদের মানসিক স্ব্যাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । শুধু পার্থক্যটা একটা জায়গায় ,মানষিক স্বাস্থের ক্ষতি দেখা যায় না ,ক্ষতিপূরন হয় না ।একটা ত্রুটিপূর্ন বেড়ে ওঠা কখনোই ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনা সমাজে । অপরাধ , মানষিক অবক্ষয় থেকে শুরু করে বিষন্নতা ,সবকিছুর পেছনেই রয়েছে বয়সন্ধিকালের প্রভাব। সমাজ কে কেনো বারবার দোষ দিবো ? আমাদের নিয়েই তো সমাজ ,তাই না ? একজন একজন করে যদি আমরা সবাই ধীরে ধীরে  বদলে যাই ,তাহলে সমাজ ও বদলাতে বাধ্য । তাই সেক্স এডুকেশন নিয়ে নিজে জানবো , পরিবারের ছোটদের জানাবো  এবং লজ্জ্বা না পেয়ে  বন্ধু /সহকর্মীদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করব ।