একটা সুখবর দিয়ে শুরু করি । বাংলাদেশ আগামী বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সমাবেশে (SDG voluntary national review (VNR)) অংশগ্রহন করতে যাচ্ছে। তার মানে হলো, জাতিসংঘের দেয়া ১৭ টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ পর্যন্ত আমাদের দেশে যত কাজ হয়েছে , এর বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রেরন করা হবে বাংলাদেশ  সরকারের পক্ষে থেকে ।আর এই  সমাবেশের আয়োজন করবে  United Nations  Economic and Social Council ।এই সমাবেশের আসর বসবে আমেরিকাতে , জাতিসংঘের সদর দপ্তরে।

এখন নিশ্চই তোমার মনে প্রশ্ন জেগেছে , এই “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা”/ Sustainable development goals(SDGs) কি ?চলো এক নজরে দেখে নিই ।

(Published in the weekly chayeer desh ,Sreemangal ,Moulvibazar)

‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)’ বা টেকসই উন্নয়ন বলতে ঐ ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে বোঝায় যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাও নিশ্চিত হয় আবার প্রকৃতি এবং বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমেও কোনো বাজে প্রভাব পড়ে না। ভিন্নভাবে বললে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হলো, ভবিষ্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা।Millennium Development Goals এর লক্ষ্যমাত্রা সফল্ভাবে সম্পন্ন হবার পর ,২০১৫ সালে জাতিসংঘ দারিদ্র্য বিমোচন, বিশ্ব রক্ষা এবং একটি নতুন টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা হিসেবে জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর জন্য এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিতে ১৭টি লক্ষ্য ও ১৬৯ টি সহায়ক লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করে।

এসডিজি বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল, এমডিজি বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে প্রতিস্থাপিত করেছে, যার মেয়াদ ‌শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে।টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা হলো:

 

  •  এসডিজি ১. দারিদ্র্য বিমোচন
  •  এসডিজি ২. খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির উন্নয়ন ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন
  •  এসডিজি ৩. সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা
  •  এসডিজি ৪. মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ
  •  এসডিজি ৫. লিঙ্গ সমতা
  •  এসডিজি ৬. সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা
  •  এসডিজি ৭. সকলের জন্য জ্বালানি বা বিদ্যুতের সহজলভ্য করা
  •  এসডিজি ৮. স্থিতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণকালীন উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থান ও কাজের পরিবেশ
  •  এসডিজি ৯. স্থিতিশীল শিল্পায়ন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা
  •  এসডিজি ১০. দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তঃরাষ্ট্রীয়বৈষম্য হ্রাস
  •  এসডিজি ১১. মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা
  •  এসডিজি ১২. সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার
  •  এসডিজি ১৩. জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ
  •  এসডিজি ১৪. টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা
  •  এসডিজি ১৫. ভূমির টেকসই ব্যবহার
  •  এসডিজি ১৬. শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ, সকলের জন্য ন্যায়বিচার,সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং
  •  এসডিজি ১৭. টেকসই উন্নয়নের জন্য এ সব বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের স্থিতিশীলতা আনা।

 

জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন্স নেটওয়ার্কের এসডিজি সূচক এবং ড্যাশবোর্ডস রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী, ১৫৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১১তম। সবদিক মিলে বাংলাদেশের স্কোর ৫৯ দশমিক ৩। ২০১৭ সালে এর অবস্থান ও স্কোর ছিলো যথাক্রমে ১২০ ও ৫৬ দশমিক ২। (সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন)

বাংলাদেশ সরকার , সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা , স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন,লাভজনক এবং অলাভজনক সংগঠন , দাতা সংস্থা  সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে করে এই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা”/ Sustainable development goals(SDGs) গুলো অর্জন করতে পারে।

দেশ আমার ,

দায়িত্ত্ব ও আমার ।

  • তাই তোমরা যারা এখনো এসডিজি সম্পর্কে জানো না ,তারা একটু ভালো করে জেনে নাও যাতে করে আমরা আমাদের দেশে ভালোভাবে কাজ করে দেশের অবস্থার উন্নতি করতে পারি ,কারন আমাদের হাতে এখনো অনেক সময় আছে কেননা এই এসডিজি ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্জন করার সময় আছে ।
  • আর যারা ইতিমধ্যেই জানো এসডিজি সম্পর্কে ,তারা কাজে নেমে পরো ।অনেক সংস্থা আছে বাংলাদেশে যারা এসডিজি নিয়ে কাজ করছে । সেগুলোকে খুজে বের করো এবং কাজ শুরু করে দাও।
  • আর যারা ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত আছো ,তোমরা  চেস্টা করো নিজেদের কাজগুলো এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ফেলে কাজ করতে ,একটু গুছিয়ে নিতে সময় লাগবে কিন্তু এতে করে তুমি তোমার দেশের সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবে । আর এ জন্য তোমার প্রজেক্টের কাজকে সরকারী অথবা বেসরকারী সংস্থার সাথে যুক্ত করতে হবে ,যাতে করে তুমি তোমার কাজের রিপোর্ট জমা দিতে পারো ।এতে করে দেশে ভালো কাজও হবে ,আর বাংলাদেশ এই লক্ষমাত্রাগুলো   অর্জন করতে পারবে।

 

এবার আসি একটু ভিন্নকথায় । তুমি যদি মনে করো , ঐক্যমত মানে ভিন্নমতের প্রতি  সম্মান প্রদর্শন করা এবং স্বাগত জানানো , তাহলে তোমাকেই এই মূহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। দল ,মত , জাতি , ধর্ম ,বর্ন ,গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে  এক হয়ে হাতে হাত রেখে  কাজ করতে হবে , শুধু বাংলাদেশের জন্য ।

সম্প্রতি আমি জার্মানিতে একটি স্থানীয় নির্বাচনের প্রচারনীতে অংশ নিয়েছিলাম। কারন ওরা ওদের প্রচারনা করেছে এসডিজির বেশ  কয়েকটি লক্ষমাত্রা নিয়ে। আর আমি যেহেতু এসডিজির তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি , তাই ৪ টা ইন্টারভিউর পর আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম । নির্বাচনী প্রচারনায় আমি এসডিজি , আমার কাজের অভিজ্ঞতা ,ওই রাজনৈতিক দল এবং সে দলের প্রার্থীর এসডিজি বিষয়ক কাজ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছি । রাজনৈতিক দলের ক্যাম্পেইন এতোটা শান্তিপূর্ন হতে পারে ,সেটা আমি আগে জানতাম না ।

আমাদের দেশের সমস্যা হলো ,এরকম প্রজেক্ট ভিত্তিক রাজনীতি সেই অর্থে এখনো চালু হয়নি ,যার কারনে যেসব তরুন নেতৃত্ত্ব সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা রাজনীতি বিমুখ হচ্ছে ,আর এর ফলসরুপ আমরা নেতৃত্ত্ব দিতে এমন ছাত্র সমাজকে দেখি ,যাদেরকে সঠিক পথা দেখানোর মত কেউ নেই এবং ছাত্র রাজনীতি অন্যরকম অবিশ্বাসের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। আমি সে ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহন করেছি ,এর মানে কিন্তু এটা না যে আমি রাজনীতিতে যোগদান করেছি । দেশের বাইরে এরকম নির্বাচনী প্রচারনায় সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত ছাত্র-ছাত্রীদের বাছাই করা হয় । কিন্তু এই একই সুযোগ যদি আমাকে বাংলাদেশে দেয়া হত, এই মূহুর্তে আমি জীবনেও এরকম নির্বাচনী প্রচারনায় অংশগ্রহন করতাম না ।আর এটাই প্রধান পার্থক্য,আমাদের দেশের রাজনীতির সাথে উন্নত দেশের । এজন্যই বলেছি ,প্রজেক্ট ভিত্তিক রাজনিতী চালু করা এখন সময়ের দাবি , এতে করে তরুনরা কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ করে তুলবে , নতুন কর্মসংস্থান সৃস্টি হবে এবং দেশেরও উপকার হবে ।আর সেই সাথে ছাত্র রাজনীতিতে কিছু বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেয়া উচিত ,যাতে করে কোনো স্টূডেন্ট পড়াশোনা বাদ দিয়ে , সময় নস্ট করে , তথাকথিত নেতাদের পেছনে ঘুরে ,রাজনীতিকে জীবিকা উপার্জনের হাতিয়ার বানিয়ে নিজের ,পরিবারের এবং দেশের ক্ষতি না করে।

 

শেষ করবো একটি কথা বলে ,রাজনৈতিক দল আর সরকারকে মিলিয়ে ফেলবে না । তুমি যেই দলের মতাদর্শেই বিশ্বাস করো না কেনো অথবা কোনো দলকে সাপোর্ট না করলেও ,তুমি জন্মসূত্রে যে দেশের নাগরিক ,সে দেশের সরকার “তোমার” । তাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে । আর এই সুবর্ন সুযোগটি তুমি লুফে নিতে পারো “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা”/ Sustainable development goals(SDGs) “ নিয়ে কাজ করে।

দেশ আমাদের ,

দোষ আমাদের ,

আর তাই পরিবর্তনের দায়িত্ত্বও আমাদের।