যেকোনো শর্টকাট ডায়েটই অসাস্থ্যকর । ডায়েট শব্দটাই আমাদের মনে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃস্টি করে।তাই ডায়েট না বলে “সুষম” বা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাতালিকা বললে ভালো হয় ।কারন ডায়েট করলে “এই খাবার খাওয়া যাবেনা ,ওই খাবার বাদ দিতে হবে” -এরকম ভাবলে এটি আমাদের উপর মানষিক চাপ(স্ট্রেস) সৃষ্টি করে ।এর ফলে স্ট্রেস হরমোন( কর্টিসল) আমাদের শরীরে রিলিস হতে পারে,যা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই যেকোনো ধরনের শর্টকাট ডায়েটই আমাদের শারীরিক এবং মানষিক স্বাস্থ্যের জন্য অসাস্থ্যকর ।ইদানিং আমরা যত শর্টকাট ডায়েট এর কথা শুনি বা দেখতে পাই ,তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাই আজকের এই আর্টিক্যালে অস্বাস্থকর কিটো ডায়েট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।(খাদ্যাভাস, বন্ধ্যাত্ত্ব, প্রজনন তন্ত্র এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের উর্বরতা )
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পরিমিত পরিমানে শর্করা,আমিষ ,চর্বি ,ভিটামিন ,মিনারেল এবং পানি পরিমিতি পরিমানে থাকতে হবে ।এমনকি কেউ যদি ওজন কমাতে চান না নিয়ন্ত্রনে রাখতে চান ,তাহলে তার খাদ্যতালিকায় এই প্রত্যেকটি পুস্টি উপাদান থাকতে হবে ।কারন পুস্টিহীনতা বা পুস্টি ঘাটতি বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয় ।কিন্তু যেকোনো ধরনের শর্টকাট ডায়েটে প্রত্যেকটি পুস্টি উপাদান পরিমিত পরিমানে থাকেনা। আর অসাস্থকর কিটো ডায়েটে আমিষ বা প্রোটিন এর পরিমান বেশি থাকে এবং শর্করার পরিমান খুব কম থাকে ।তাই এই ডায়েট অসাস্থ্যকর এবং ক্ষতিকর ।
অসাস্থ্যকর কিটো ডায়েটে শর্করাকে খুব কম পরিমানে খাওয়া হয় ।এমনিতেই মানুষ শর্করা জাতীয় খাবারকে ভয় পায় ,কিন্তু শর্করার দুটি প্রকারভেদ আছে । ভালো শর্করা এবং খারাপ শর্করা।খারাপ শর্করাকে( Simple carbohydrates) বাদ্ দিতে হবে, এবং ভালো শর্করাকে পরিমিত পরিমানে খেতে হবে (Complex carbohydrates)। কিন্তু অসাস্থ্যকর কিটো ডায়েটে সব শক্তি বা ক্যালরি নেয়া হয় আমিষ এবং চর্বি থেকে ,শর্করা থেকে মাত্র পাচ ভাগ ,যেটাও পরিমিত না ।আমাদের প্রতিদিন যত শক্তি বা এনার্জি দরকার তার চাহিদা পূরন হয় শর্করা,আমিষ ,এবং চর্বি থেকে ।যে শক্তি শর্করা থেকে পাবো ,যেটার পরিপূরক আমিষ বা চর্বি না। তাই খাদ্যতালিকায় সবকিছু পরিমিত পরিমানে থাকতে হবে। আর কিটো ডায়েটে সব পরিমিত পরিমানে থাকেনা বলে ,তা শারিরীক এবং মানষিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ।কারন শর্করা থেকে প্রাপ্ত শক্তি আমাদের শরীরের অনেক কাজ এর জন্য নির্দিস্টভাবে দরকার ,যেটা প্রোটিন বা ফ্যাট থেকে প্রাপ্ত শক্তি দিয়ে পূরন করা সম্ভব নয় ।
এবার আসি অস্বাস্থকর কিটো ডায়েট এর ইতিহাসে ।আমরা কি জানি ,কেনো এই ডায়েট আবিস্কৃত হয়েছিলো? আসলে এপিল্যাপ্সি এবং বিশেষ কিছু ক্যান্সার এর চিকিতসার জন্য এই ডায়েট তৈরি করা হয়েছিলো , ওজন কমানোর জন্য নয় ।কিন্তু ইদানিংকালে কিটো ডায়েট অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ,কারন অনেক অল্প সময়ে এই অসাস্থ্যকর ডায়েট করে ওজন কমানো যায় ।কিন্তু কোথাও বলা হয় না ,এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কি কি বা আমাদের শারিরীক এবং মানষিক স্বাস্থ্যের উপর কতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী করে।
আসুন এবার এক নজরে জেনে নেই এই অসাস্থ্যকর কিটো ডায়েট কেনো ক্ষতিকর :
১) কিটো ডায়েট করলে আমাদের শরীর কিটোসিস মোডে চলে যায় ।তখন শরীরে শর্করার ঘাটতি থাকে ,তাই শরীর ফ্যাট এবং কিটোনস থেকে এনার্জি নেয় ।এই কারনেই এই ডায়েটে ওজন কমতে থাকে ।আর তাই এই সময়ে Keto flu হবার সম্ভাবনা থাকে।এই flu তে মাথাব্যাথা,বমি বা বমি বমি ভাব ,বিষন্নতা ,মুড সুইং ,জ্বর জর ভাব,এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে ।
২)কিটো ডায়েট সুস্থ্য মানুষের কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। কারন এই ডায়েটে বেষী পরিমানে ফ্যাট এবং প্রোটিণ খাওয়া হয় ,যার ফলে ব্লাড এবং ইউরিন এসিডিক হয়ে যায়,এবং তখন ইউরিনে বেশি পরিমানে ক্যালসিয়াম নির্গত হতে থাকে ।আর আমরা জানি যে ,কিডনি সেই ইউরিনকে ফিল্টার করে। এছাড়াও কিটো ডায়েট কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
আর যারা কিডনি রোগী ,তাদের ন্য কিটো ডায়েট সম্পুর্ন নিষিদ্ধ্ব।কারন কিডনি রোগীদের খাবারে প্রোটিন এর পরিমান কম থাকবে কিন্তু অসাস্থকর কিটো ডায়েটে এই প্রোটিন এবং ফ্যাট এর পরিমান বেশি থাকে ।
৩) যেহেতু কিটো ডায়েটে শর্করার পরিমান খুবই কম এবং অনেক ফল বা সবজি বাদ দেয়া হয় ,তাই এই ডায়েট এর ফলে শরীরে ফাইবার এর চাহদা পূর্ন হয় না ,তাই বুক জ্বালাপোড়া করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৪)পুস্টিহীনতা
৫) টাইপ ওয়ান ডায়েবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে লো ব্লাড সুগারের সম্ভাবনা থাকে।
৬)হাড়ের সাস্থ্যের ক্ষতি করে
৭)অনেক ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি করে এবং মৃত্যু ঝুকি বাড়ায় ।
এই ডায়েটে ওজন কমে ঠিকই কিন্তু আবার আগের জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভাসে ফিরে গেলে ,ওজন আরো দ্বিগুন হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আর এই কারনেই কিটো ডায়েট দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনতে পারেনা বরং ক্ষতি করে ।আর যেহেতু এই কিটো ডায়েট ওজন কমানোর জন্য আবিস্কৃত হয়নি ,তাই ওজন কমাতে এই ডায়েট একেবারেই বেমানান।কিটো অথবা অন্য যেকোনো শর্টকাট ডায়েট করা থেকে বিরত থাকুন ।দেশীয় খাবারে অভস্ত্য হোন ।বাসার তৈরী খাবার খান ।বাইরের ভাগাপোড়া ,ফাস্ট ফুড,জাংক ফুড ,কোমল পানীয় খাওয়া কমান ।একেবারে ছেড়ে দিতে না পাড়লেও কমীয়ে আনুন ।খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনুন,নিয়মিত শরীরচর্চা করুন,ঠিকমত ঘুমান এবং মানষিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্য নিজের শখের পরিচর্যা করুন ,ভালো কাজ করুন ,ভালো চিন্তা করুন এবং অন্যকে সাহায্য করুন ,নিজে অনুপ্রানিত হোন এবং অন্যকেও ভালো কাজে অনুপ্রানিত করুন।
Recent Comments