চলো এক নজরে জেনে আসি মহিলা প্রজনন তন্ত্রের গুরুত্ত্বপূর্ন অংশগুলোর নাম ।
মহিলা প্রজনন তন্ত্রের (Female reproductive system ) অনেক গুলো গুরুত্ত্বপূর্ন কাজ আছে ,
তার মধ্যে একটি হলো প্রজনন ( reproduction) এর জন্য এগ সেল (egg cells) তৈরী করা। একে বিজ্ঞানের ভাষায় অভা (ova or oocytes ) এবং বাংলায় ডিম্বানূ বলে থাকে ।
মহিলা প্রজনন তন্ত্র এমন ভাবে তৈরী করা আছে ,যা এই ডিম্বানুকে প্রজনন এর জন্য ডিম্বাশয়ের নিষেকের স্থানে পৌছে দেয় । আর আমরা জানি যে, পুরুষ প্রজনন তন্ত্র ( মেইল রিপ্রডাক্টিভ সিস্টেম) শুক্রানু (স্পার্ম) তৈরী করে । একজন মা এর ডিম্বানু ,একজন বাবার শুক্রানু বা স্পার্ম এর মাধ্যমে ফার্টিলাইজড বা নিষিক্ত হয় এবং এই ফার্টিলাইজড হওয়ার প্রক্রিয়াকে কনসেপশন (conception) বলে ।
আর এই কনসেপশন এর সম্পূর্ন প্রক্রিয়াটি হয়ে থাকে ফেলোপিয়ান টিউবসে (fallopian tubes)। নিষিক্ত ডিম্বানু পরবর্তীতে ইঊটেরাস অথবা জরায়ুর দেওয়াল ভেদ করে সেখানে প্রবেশ করে এবং এভাবেই প্রেগনেন্সির প্রথম ধাপ শুরু হয়। সুতরাং এ থেকেই বোঝা যায় যে ,একটি মানব সন্তান জন্ম দানের জন্য এই এই ডিম্বানুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং মহিলা প্রজনন তন্ত্র এই ডিম্বানু তৈরী করে।
আর যদি ডিম্বানু শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত না হয় এবং এই ফার্টিলাইজেশন এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন না হয় ,তাহলে তখন মেয়েদের মাসিক অথবা পিরিয়ড হয় ।
মাসিকের সাথে মাতৃত্ত্বের খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন যোগসূত্র রয়েছে।
এছাড়াও মহিলা প্রজনন তন্ত্র এবং ব্যবস্থা লৈঙ্গিক হরমোন (female sex hormones) তৈরি করে ,যা প্রজনন চক্রকে বজায় রাখে।
এবার চলো জেনে নেই মহিলা প্রজনন তন্ত্রের দৈহিক গঠনতন্ত্র।
এর দুইটা অংশ আছে, একটা হলো বহিরাগত মহিলা প্রজনন তন্ত্রের দৈহিক গঠনতন্ত্র (external female reproductive structures) এবং আরেকটি হলো অভ্যন্তরীন মহিলা প্রজনন তন্ত্রের দৈহিক গঠনতন্ত্র( internal female reproductive structures) ।
মহিলা প্রজনন তন্ত্রের বহিরাগত দৈহিক গঠনতন্ত্র বা স্ট্রাকচারগুলো হলোঃ
১) ল্যাবিয়া ম্যাজোরা (Labia majora)
২) ল্যাবিয়া মাইনোরা (Labia minora)
৩) বার্থোলিনস গ্ল্যান্ড (Bartholin’s glands)
৪)ক্লিটোরিস (Clitoris)
১) ল্যাবিয়া মাজোরা-
এটি অন্যান্য বাহ্যিক প্রজনন অঙ্গগুলিকে আবদ্ধ এবং সুরক্ষিত করে। একে অনেক সময় বড় ঠোট ( large lips)বলা হয় এবং পুরুষ প্রজনন তন্ত্রের স্ক্রোটমের সাথে তুলনীয়। লাবিয়া মাজোরায় কিছু গ্রন্থি (sweat and oil-secreting glands) থাকে ,আর এ কারনে আমরা অনেক সময় ঘেমে যাই ,এবং অনেকের স্কিন তৈলাক্ত হয়ে যায় ।আর বয়ঃসন্ধিকাল শেষ হয়ে গেলে ল্যাবিয়া মাজোরা চুল অথবা লোম দিয়ে ঢাকা থাকে।
২) ল্যাবিয়া মাইনোরা –
আবার ল্যাবিয়া মাইনোরা (Labia minora ) কে ছোটো ঠোট ( small lips) বলা হয়ে থাকে। ল্যাবিয়া মিনোরা খুব ছোট বা দুই ইঞ্চি পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে। এগুলি কেবল ল্যাবিয়া মাজোরার ভিতরে থাকে এবং ভ্যজাইনার সম্মুখকে (অপেনিং) ঘিরে থাকে এবং ইউরেথ্রার সম্মুখককে ( Urethral opening) ঘিরে রাখে মূত্রনালী ,আর এই নালী মূত্রাশয় থেকে শরীরের বাহিরে প্রস্রাব বহন করে।তার মানে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি মহিলা প্রজনন তন্ত্রের একটি অংশ আরেকটির সাথে অতপ্রতোভাবে জড়িত এবং একটির কাজ অন্যটিকে প্রভাবিত করে এবং সাহায্য করে।
৩) বার্থোলিন গ্ল্যান্ড ( Bartholin’s glands )-
যৌন উত্তেজনা (sexual arousal) এবং যৌন মিলনের (sexual intercourse) সময় এক ধরনের মিঊকাস বা শ্লেষ্মা রিলিস করে,যা পিচ্ছিলকারক পদার্থ ( লুবরিক্যান্ট) হিসেবে কাজ করে। এই তরল পদার্থ সাধারনত ভেজাইনার মুখে ( ভেজাইনাল অপেনিং) কে শুস্কতার হাত থেকে রক্ষা করে , মসৃন করে এবং আদ্র রাখে।
৪) ক্লিটোরিস (Clitoris)-
একে বাংলায় ভঙ্গাংকুর বলে যার মধ্যে দুটি ল্যাবিয়া মিনোরা মিলিত হয়, একটি ছোট, সংবেদনশীল প্রস্রাব যাকে পুরুষ প্রজনন তন্ত্রের প্রধান অঙ্গ পেনিসের সাথে তুলনা করা হয় কারন এটিও পিনেসের মত একটি । ক্লিটোরিস চামড়ার ভাঁজ দ্বারা ঢাকা থাকে , যাকে বলা হয় প্রিপিউস, যা পিনেসের শেষের অংশের চামড়ার মতো।
এতক্ষন যা জানলে, সব বহিরাগত মহিলা প্রজনন তন্ত্রের দৈহিক গঠনতন্ত্র ।
এখন জানবো অভ্যন্তরীন মহিলা প্রজনন তন্ত্রের দৈহিক গঠনতন্ত্র নিয়ে । এর চারটি প্রধান অংশ রয়েছে আর এগুলো হলো , যোনী/ভেজাইনা, জরায়ু বা ইঊটেরাস (Uterus), ডিম্বাশয় (Ovaries) এবং ফেলোপিয়ান টিউব(Fallopian tubes)
১) যোনী/ভেজাইনা-
যোনি (vagina) কে বার্থ ক্যানাল (Birth Canal) বলা হয়ে থাকে যা জরায়ুকে একজন মহিলার শরীরের বাইরে অংশের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। জরায়ু স্ত্রী প্রজনন তন্ত্রের একটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ।জরায়ু একটি হরমোন প্রতিক্রিয়াশীল অঙ্গ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হরমোন ক্ষরণের দ্বারা এর কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হয়।
২)ইউটেরাস বা জরায়ু –
গর্ভধারণকালে ফিটাস জরায়ুর অভ্যন্তরে বড়ো ও বিকশিত হয়। ইউটেরাস বা জরায়ু শব্দটি মূলত চিকিৎসা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, অপরদিকে দৈনন্দিন ব্যবহারে মূলত ওম্ব বা গর্ভথলি শব্দটি প্রাধান্য পায়। ইংরেজিতে জরায়ুকে বহুবচনে uteruses (ইউটেরাসেস) বা uteri (ইউটেরি) বলে।
জরায়ুর প্রান্তদেশ মোট তিনটি। একটি সারভিক্সে এসে শেষ হয়, যা যোনিতে গিয়ে উন্মুক্ত হয়। অপর দুটি প্রান্ত জরায়ুর উভয় পাশে দুই ফেলোপিয়ান নালিতে উন্মুক্ত।
যাঁদের জরায়ুতে ক্ষত আছে, তাঁদের যোনি পথে জন্মদানের সময় ঝুঁকি মোটামুটি প্রতি ১২,০০০ জনে ১ জন। শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৬%।উন্নয়নশীল দেশের মানুষ আরওবেশি আক্রান্ত হন এবং সেক্ষেত্রে ফলাফল খারাপ।
আর তাই পিরিয়ডের সময় এবং এমনকি অন্যান্য সাধারন সময়েও মেয়েদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উচিত,যাতে করে জরায়ুতে কোনো ইনফেকশন না হয়, জরায়ু এবং এর সাথের অন্যান্য অংগপ্রত্যংগ সুস্থ্য থাকে। একজন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার প্রথম ধাপই হতে পারে জরায়ুর সুস্থতা নিশ্চিত করা।
৩) ডিম্বাশয়/অভারিঃ ডিম্বানু এবং লৈঙ্গিক হরমোন (eggs and hormones তৈরী করে।
৪) ফেলোপিয়ান টিউব (Fallopian tubes )-
প্রধানত ডিম্বানুকে ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে পৌছে দেয় এবং নিষেকে এবং গর্ভধারনে সহায়তা করে। এছাড়াও মেয়েদের আঠাশ দিনের যে মাসিক চক্র সেখানে ইতিবাচক ভাবে অভুল্যুশন এর মাধ্যমে উর্বরতা বৃদ্ধি এবং বজায় রাখতে সহায়তা করে।
Recent Comments